Skip to main content

Full text of "Sonar Tari Ed. 2"

See other formats




মোনার তরী। 


দ্বিতীয় সংস্করণ 


কলিকাতা ; 


১৩/৭ নং বৃন্দাবন বসুর লেন, সাহিত্য-যন্ত্রে 
শ্রীযজ্ঞেশ্বর ঘোষ কর্তৃক মুদ্রিত. 
ও 
৬ নং দ্বারকানাথ ঠাকুরের লেন হইতে 
শ্রীকালিদাস চক্রবর্তী কর্তৃক প্রকাশিত। 


১৩০১ । 


কবি-ত্রাতা শ্রীদেবেক্্রনাথ রি 
মহাশয়ের কর-কমলে 
তদীয় ভক্তের এই 
প্রীতিউপহাঁর 
সাদরে সমপিত 


হইল । 


সূচা।, 


শাস6$বা 


/ ফ্োনারুতরী 2০-48-2247 48 
পবিষ্ববতী (রূপকথা)... ... ৮. ০, ০৮০০৪ 
শৈশব সন্ধ্যা ... 7 রা, 
রাজার ছেলে ও রাজার মেয়ে (রূপকথা) 1... ২২ ৯০১১ 
নিদ্রিতা তত তি তি তত ভিত হি তত তত ৫, 
স্বপ্তোখিতা ... ১.১ ০. ০ এ এ তে ১৯ 
তোমরা এবং আমরা... .১. ১১ তত তত তত ৩০ ই৬ 
দোনার বাধন ... ... ১২. ০১০০০, ১৮-০ 
বর্ষা যাপন ৮ .*, 
“ হিং টিং ছট্‌ 
“ পরশ-পাঁথর 
/বৈষণবকবিতা রঃ 
রে দুই পাখী ৬, 
. আকাশের চাদ. 
রিড 25574575518, 85. 85 
| যেতে নাহি দিব রর 
মম প্রতি 75481 5 -5:355-855 1 
“নিয়াসরী। ১5... 2 -. , ৮৮ 
অনাদূত *. ১৮ ০ নি তত তক তি ০১ * ১০৪. 


নদীপথে ... 
ক ৭ 


০ 
5 
গু 


মির: 





॥০ 
বিষয় 
দেউল 
এপ . 
_ ছুর্কোধ হর 
২ ঝুলান উন 
হৃদয়-যমুন। 
ব্যর্থ যৌবন 
_ ভবা ভাদরে 


“. অক্ষম 

দরিদ্রা ... 
আত্মসমর্পণ 
অচল স্থৃতি 


'জ্ুলনায় সমালোচনা . 





0লালাল্র ভল্জ্রী £ 





সোনার তরী। 


গগনে, গরজে মেঘ, ঘন বরষা। 
কূলে "একা বসে” আছি, নাহি ভরসা। 
রাশি রাশি ভারা ভার! 
ধান কাটা হ'ল সারা, 
ভরা নদী ক্ষুরধার! 
খর-পরশা। | 
কাটিতে কাঁটিতে _ধাঁন এল বরষা । 





একখানি ছোঁট ক্ষেত আমি একেলা, 
চারিদিকে বাঁকা জল করিছে খেলা । 
পরপারে দেখি আঁকা | 
তরুছাঁয়ামসীমাখা 
গ্রাখানি মেঘে ঢাকা 
প্রভাত বেলা। 
এ পারেতে ছোট ক্ষেত আমি একেলা। 


%ত . 


সোনার তরী । 


পপ 
ঢ 


গান গেয়ে তরী বেয়ে কে আসে পারে! 
, দেখে? যেন মনে হয় চিনি উহারে। 
“*... ভরা-পালে চলে যায়, 
কোন দিকে নাহি চায়, 
ঢেউগুলি নিরুপায় 
ভাঙ্গে ছুধারে, 
দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে ! 


ওগো তুমি কোথা যাও কোন্‌ বিদেশে ! 
বারেক ভিড়াও তরী কুলেতে এসে! 
যেয়ে যেথ। যেতে চাও, 
যারে খুসি তারে দাও 
শুধু তুমি নিয়ে যাও 
ক্ষণিক হেসে, 
আমার সোলার ধান কুলেতে এসে ! 


যত চাও তত লও তরণী ০র। 
আর আছে ?--আর »।হ, দিয়েছি ভরে । 
এতকাল ন্দীকূলে 
বাহ! লঃয়ে ছিন্থ ভুলে 
দকলি দিলাম তুলে? 
থরে বিথরে 
এখন আমারে লহ করুণা করে! ! 


সোনার তরী । ৩ 


ঠাই নাই, ঠাই নাই! ছোট সে তরী 
আমারি সোনার ধানে গিয়েছে ভরি” | 
শ্রাবণ গগন ঘিরে 
ঘন মেঘ ঘুরে ফিরে, 
শুন্ঠ নর্দীর তীরে 
রহি্ন পড়ি” 
যাহ! ছিপ নিয়ে গেল সোনার তরী। 


ফাল্তন, ১২৯৮। 


_ বিশ্ববতী । 


( রূপকথা ! ) 


সধত্বে সাঁজিল রাণী, বাঁধিল কবরী, 
নবঘনন্সিগ্ধবর্ণ নব নীলান্বরী 

পরিল অনেক সাধে । তার পরে ধীরে 
গুপ্ত আবরণ খুলি, আঁনিল বাহিরে 
মায়াময় কনক দর্পণ। মন্ত্র পড়ি? 
শুধাইল তারে--কহ মোরে সত্য করি, 
সর্বশ্রেষ্ঠ রূপসী কে ধরায় বিরাজে । 
ফুটিয়া উঠিল ধীরে মুকুরের মাঝে 
মধুমাঁথা হাসি-আকা! একখানি মুখ, 
দেখিয়া বিদারি” গেল মহিষীর বুক-_ 
রাজকন্তা বিশ্ববতী সতীনের মেয়ে 
ধরাতলে রূপমী সে সবাঁকার চেয়ে ! 


তাঁর পর দিন রাণী প্রবাণ হার 
পরিল গলায় । খুলি” দিল কেশভার 
আজানুচুষ্বিত। গোলাপী অঞ্চলখানি, 
লজ্জার আভাসসম, বক্ষে দিল টানি” । 
স্বর্ণ মুকুর রাখি কোলের উপরে 
শুধাইল মন্ত্র পড়ি”--কহ সত্য করে? 


_ বিশ্ববতী |, 


ধরামাঝে সবচেয়ে কে আজি রূপসী ! 
দর্পণে উঠিল ফুটে সেই সুখশশী। 
কাপিয়! কহিল রাণী, অগ্রিসম জাল1__ 
পরালেম তারে আমি বিষফুলমালা, 
তবু মরিল না! জলে” সতীনের মেঙ্ধে 
ধরাতলে রূপসী সে সকলের চেয়ে ! 


তার পরদিনে,-আবার রুধিল দ্বার 
শয়নমন্দিরে ৷ পরিল মুক্তার হার, 
ভালে সিন্দুরের টিপ, নয়নে কাঁজল, 
রক্তান্বর পষ্টবাস, সোনার আঁচল । 
শুধাইল দর্পণেরে-_-কহ সত্য করি” 
ধরাতলে সব চেয়ে কে আজি সুন্দরী ! 
উজ্জ্বল কনক পটে ফুটিয়া উঠিল 

সেই হাসিমাখ। মুখ । হিংসায় লুটিল 
রাণী শষ্যার উপরে । কহিল কাদিয়া-- 
বনে পাঠালেম তারে কঠিন বাঁধিয়া, 
এখনো সে মরিল না সতীনের মেয়ে, 
ধরাতলে রূপদী সে সবাকার্‌ চেয়ে ! 


ভার পরদিনে,_আবান্গ সাঁজিল সুখে 
নব. অলঙ্কারে ; ৰ্বিরচিল হাসিমুখে 
কবরী নুতন ছীদে বাকাইয়! শ্রীবা। 
পরিল যতন করি নবরৌদ্রবিভা 


নোনার তরী। 


নব পীতবাস। দর্পণ সম্মুখে ধরে 
গুধাইল মন্ত্র পড়ি'_-সত্য কহ মোরে 
ধরামাঝে সব চেয়ে কে আজি রূপসী! 
সেই .হাসি সেই মুখ উঠিল বিকশি” 
মোহন মুকুরে। রাণী কহিল জ্বলিয়া- 
বিষফল খাওয়ালেম তাহারে ছলিয়া, 
তবুও. মে মরিল না সতীনের মেয়ে, 
ধরাতলে রূপসী সে সকলের চেয়ে! 


তার পর দিনে রাণী কনক রতনে 
খচিত করিল তন্থু অনেক যতনে । 
দর্পণেরে শুধাইল বহু দর্পভরে-_- 
সর্ধশ্রেষ্ঠ রূপ কার বল্‌ সত্য করে। 
দুইটি সুন্দর মুখ দেখা দিল হাসি, 
রাজপু্র রাঁজকন্তা! দৌহে পাশাপাশি 
বিবাহের বেশে ।-অঙ্গে অঙ্গে শিরা যত 
রাণীরে দংশিল যেন বৃশ্চিকের মত। . 
চীৎকারি, কহিল রাণী ক" হানি” বুকে, 
মরিতে দেখেছি তারে আপন সম্মুথে 
কার প্রেমে বাচিল সে সতীনের মেয়ে 
ধরাতলে রূপসী সে সকলের চেয়ে ! 
ঘষিতে লাগিল রাণী কনক মুকুর 

বালু দিয়ে--প্রতিবিষ্ব নাহি হল দুর।, 


বিশ্ববতী | 


মী লেপি দিল তবু ছবি ঢাকিল না। 
অগ্নি দিল, তবুও ত গলিল না সোনা। 
আছাড়ি' ফেলিল ভূমে গ্রাণপণ বলে 
তাঙ্গিল না সে মায়া-দর্পণ। ভূমিতলে 
চকিতে পড়িল রাণী, টুটি' গেল প্রাণ ;-- 
সর্বাঙ্গে হীরকমণি অগ্নির সমান 

লাগিল জলিতে; ভূমে পড়ি” তারি পাশে 
কনক দর্পণে ছুটি হাসিমুখ হাসে। 

" বিশ্ববতী, মহ্ষীর সতীনের মেয়ে 
ধরাতলে রূপদী দে সকলের চেয়ে। 


ফান্তুন, ১২৯৮। 


শৈশব সন্ধ্যা । 


ধীন্সে ধীরে বিস্তারিছে ঘেরি চারিধার 
শাস্তি, আর শাস্তি, আর সন্ধ্যা-অদ্ধকার, 
মায়ের অঞ্চলসম । ঠাড়ায়ে একাকী 
মেলিয়া পশ্চিম পানে অনিমেষ আঁখি 
স্তব্ধ চেয়ে আছি) আপনারে মগ্ন করি' 
অতলের তলে, ধীরে লইতেছি ভরি, 
জীবনের মাঝে-আজিকাঁর এই ছবি, 
জনশূন্ত নদীতীর, অস্তমান রবি, 

মান মুচ্ছাতুর আলো-_-রোদন-অরুণ 
ক্লাস্ত নয়নের যেন দৃষ্টি সকরুণ 

স্থির বাক্যহীন,-এই গভীর বিষাদ, 
জলে স্থলে চরাচরে শ্রাস্তি অবসাদ। 


সহসা উঠিল গাহি” কোন্থান্‌ হতে 
বন-অন্ধকারঘন কোন 'খামপথে 

যেতে যেতে গৃহ্মু* বালকপথিক | 
উচ্ছৃসিত কঠস্বর নিশ্চিন্ত নিভীক 
কাপিছে সপ্ন হরে; তীব্র উচ্চতান 
সন্ধযারে কাটিয়া যেন করিবে হান । 
দেখিতে না পাই তারে; ওই যে সম্মুখে 
প্রাস্তরের সর্ধ প্রান্তে, দক্ষিণের মুখে, 


শৈশব সন্ধ্য। ৷ 


রর 


সু্লাখের ক্ষেতের পারে, কদলী সুপারি 
এ, বড় বাঁশের বন, মাঝখানে তারি 
শাম করিছে গ্রাম,হৌথ। আঁখি ধায়। 
রণ টি পানে গেয়ে চলে? যাক 


চা 







নাহি চাঁয় টানে নাহি আগুপিছু | 


দেখে শুনে মনে পড়ে মেই সন্ধেবেল! 
_ শৈশবে; কত গন, কত বাল্যখেলা, 
এক বিছানাক্ন শুয়ে মৌর| সঙ্গী তিন; 
সেকি আজিকার কথা, হল কত দিন! 
এখনো! কি বৃদ্ধ হয়ে যায় নি সংসার! 
ভোলে নাই খেলাধুলা, নয়নে তাঁহার 
আসে নাই নিদ্রাবেশ শীস্ত স্ুশীতল, 
বাল্যের খেলানাগুলি করিয়া বদল 
পাঁয় নি কঠিন জ্ঞান! দীড়ায়ে হেথায় 
নির্জন মাঠের মাঝে, নিস্তব্ধ সন্ধ্যায়, 
শুনিয়! কাহার গাঁন পড়ি” গেল মনে 
কত শত নদীতীরে, কত আত্রবনে, 

1ংস্তঘণ্টামুখরিত মন্দিরের ধারে, 

ত শস্তক্ষেত্রপ্রান্তে, পুকুরের পাড়ে 
গৃহে গৃহে জাগিতেছে নব হাসিমুখ, 
নবীন হদয়ভর! নব নব সুখ, 


157 


১৯০ 


সোনার তরী। 


কত অসম্ভব কথা, অপূর্ব কল্পনা, 
কত অমূলক আশা, অশেষ কামনা, 
অনন্ত বিশ্বীস। দীড়াইফ়া অন্ধকারে 
দেখিন্কু নক্ষত্রালৌকে, অসীম সংঙারে 
রয়েছে পৃথিবী তরি বালিক বালক, 
সন্ধ্যাশয্যা, মার মুখ, দীপের আলোক । 
* ফাল্তুন, ১২৯৮। 


রাজার ছেলে ও রাজার মেয়ে। 


(রূপকথা |) 


প্রভাতে । 


রাজার ছেলে যেত পাঠশালায়, 
রাজার মেয়ে যেত তথা । 
ছু'জনে দেখা হ'ত পথের মাঝে, 
কে জানে কবেকার কথ! 
রাজার মেয়ে দূরে সরে” যেত, 
চুলের ফুল তার পড়ে' যেত, 
রাজার ছেলে এসে তুলে” দিত 
ফুলের সাথে বনলতা । 
বাজার ছেলে যেত পাঠশালায়, 
বাজার মেয়ে যেত তথা । 
পথের ছুই পাশে ফুটেছে ফুল, 
পাখীর গান গাহে গাছে। 
রাজার মেয়ে আগে এগিয়ে চলে, 
রাজার ছেলে যায় পাছে। 


৯৭২ 


সোনার তরী । 
চখ 


মধ্যাহে। 


উপরে বসে” গড়ে রাজার মেয়ে, 
রাজার ছেলে নীচে বসে। 
পুঁথি খুলিয়া শেখে কত কি ভাষা, 
খড়ি পাতিরা আঁক কষে। 
রাজার মেয়ে পড়া যাঁয় ভুলে”, 
পুথিটি হাত হ'তে পড়ে খুলে”, 
বাজার ছেলে এসে দেয় তুলে, 
আবার পড়ে” যায় খসে” । 
উপরে বসে” পড়ে রাজার মেয়ে, 
রাজার ছেলে নীচে বসে। 
হুপুরে খরতাপ, বকুলশাখে 
কোকিল কুহু কুহরিছে। 
রাজার ছেলে চায় উপর পানে, 
রাঁজার মেয়ে চায় নীচে । 


৩ 


সাক্সাহে । 


রাজার ছেলে ঘরে ফিরিয়া আসে, 
রাজার মেয়ে যায় ঘরে। 

খুলিয়া গলা হতে মোতির মাল! 
রাজার মেয়ে খেলা করে। 


রাজার ছেলে রাজার মেয়ে । ১৩ 


পথে সে মালাখানি গেল ভূলে”, 
রাজার ছেলে সেটি নিল তুলে, 
আপন মণিহার মনোতভুলে 
দিল সে বালিকার করে । 
রাজার ছেলে ঘরে ফিরিয়া এল, 
রাজার মেয়ে গেল ঘরে। 
শাস্ত রবি ধীরে অস্ত যাঁয় 
নদীর তীরে এক শেষে। 
সাঙ্গ হয়ে গেল দৌঁহার পাঠ, 
যে যাঁর গেল নিজ দেশে ।_- 


8 
নিশীথে । 


রাজার মেয়ে শোয় সোঁনার খাটে, 
স্বপনে দেখে রূপরাশি । 
বূপোর খাটে শুয়ে রাজার ছেলে 
দেখিছে কার সুধা হাঁসি! 
করিছে আনাগোনা স্থখ ছুখ, 
কথনে। ছুরু ছরু করে বুক, 
অধরে কতু কাপে হাসিটুক্‌, 
নয়ন কতু যায় ভাসি। 
রাজার মেয়ে কার দেখিছে মুখ, 
রাজার ছেলে কাঁর হাসি। 
চিএ 


১৪ 


বাদর ঝর ঝর, গরজে মেঘ, 
পবন করে মাতামাতি । 

শিথানে মাথ। রাখি বিথান বেশ, 
স্বপনে কেটে যায় রাতি। 


চৈত্র, ১২৯১। ; 


নিদ্রিতা | 


রাজার ছেলে ফিরেছি দেশে দেশে, 
সাত সমুদ্র তেরো নদীর পার। 
যেখানে যত মধুর মুখ আছে 
বাকি ত কিছু রাখি নি দেখিবার। 
কেহ বা ডেকে কয়েছে ছটো। কথা, 
কেহ বা চেয়ে করেছে আখি নত, 
কাহারে? হাসি ছুরির মত কাটে 
কাহারে হাসি আখি জলেরি মত! 
গরবে কেহ গিয়েছে নিজ ঘর 
কাদিয়া কেহ চেয়েছে ফিরে ফিরে। 
কেহ বা কারে কহে নি কোন কথা, 
কেহ বা গান গেয়েছে ধীরে ধীরে । 
এমনি করে ফিরেছি দেশে দেশে; 
অনেক দূরে তেপাস্তর-শেষে 
ঘুমের দেশে ঘুমায় রাজবালা, 
তাহারি গলে এসেছি দিয়ে মালা ! 


একদা রাতে নবীন যৌবনে 
স্বপ্র হতে উঠিন্ু চমকিয়া, 

বাহিরে এসে দাড়ান একবার 
ধরার পানে দেখিজু নিরখিয়! | 


টু ৬ 


শীর্ণ হ'য়ে এসেছে শুকতারা, 
পূর্ব তটে হ'তেছে নিশি ভোর। 
আকাশ কোণে বিকাশে জাগরণ, 
ধরণীতলে ভাঙ্ে নি ঘুম-ঘোর। 
সমুখে পড়ে” দীর্ঘ রাজপথ, 
হ'ধারে তারি দ্লাড়ায়ে তরুসাঁর, 
নয়ন মেলি” স্বদূর পানে চেয়ে 
আপন মনে ভাবিন্ একবার,-- 
আমারি মত আজি এ নিশি শেষে 
ধরার মাঝে নৃতন কোন্‌ দেশে, 
হঞ্ধফেনশব্যা করি আলা! 
স্বপ্র দেখে ঘুমায়ে রাজবালা। 


অশ্ব চড়ি” তখনি বাহিরিন্ 
কত যে দেশ-বিদেশ হন্ু পার! 
একদা এক ধুসর সন্ধ্যায় . 
ঘুমের দেশে লভিন্চ প দর! 
সবাই সেথা! অচল অচেতন, 
কোথাও জেগে নাইক জনপ্রাণী, 
নদীর তীরে জলের কলতানে 
ঘুমায়ে আছে বিপুল পুরীখানি । 
ফেলিতে পদ সাহদ নাহি মানি, 
নিমেষে পাছে সকল দেশ জাগে! 


নিদ্রিতা । ১৭ 


প্রাসাদ মাঝে পশিনু সাবধানে 
শঙ্ক। মোর চলিল আগে আগে। 
ঘুমায় রাজা, ঘুমায় ব্বাণী-মাতা, 
কুমার সাথে ঘুমায় রাঁজভ্রাতী; 
একটি ঘরে রত্র-দীপ জ্বালা, 

. খুমায়ে সেথা রয়েছে রাজবালা। 


কমলফুল-বিম্ল শেজথাঁনি, 

নিলীন তাহে কোমল তনুলতা ৷ 
মুখের পানে চাহি অনিমেষে 

বাজিল বুকে সখের মত ব্যথা ! 
মেঘের মত গুচ্ছ কেশরাশি 

শিথান ঢাকি পড়েছে ভারে ভারে । 
একটি বাহু বক্ষপরে পড়ি, 

একটি বাহু লুটায় একধারে। 
আচলখানি পড়েছে খসি” পংশে, 

কাচলখানি পড়িবে বুঝি টুটি”, 
পত্রপুটে রয়েছে যেন ঢাকা 

অনান্রাত পুজার ফুল ছুটি! 

দেখিস্ছু তারে উপমা নাহি জানি; 

ঘুমের দেশে স্বপন একখানি 3 

পালক্কেতে মগন রাঁজবাল। 

আপন ভরা লাঁবণ্যে নিরাল৷ ! 


১৮ 


পৌনার তরী | 


ব্যাকুল বুকে চাপিন্নু ছুই বাহ, 


না মানে বাধা হৃদয় কম্পন ! 
ভূতলে বসি আনত করি' শির 

মুর্দিত আঁখি করিঙ্ চু্বন ! 
পাতার ফীকে আঁখির তারা ছুটি, 

তাহারি পানে চাহিন্গ এক মনে, 
দ্বারের ফাঁকে দেখিতে চাহি যেন 

কি আছে কোথা নিভৃত নিকেতনে ! 
ভূঙ্জপাতে কাঁজলমসী দিয়া 

লিখিয়! দিন্নু আপন নাম ধাম। 
লিখিন্্ “অগ্নি নিদ্রানিগমনা, 

আমার প্রাণ তোমারে সঁপিলাম !” 

বতন করি কনকসুতে গাথি 

রতন হারে বাধিয়! দিন্থ পাঁতি। 

ঘুমের দেশে ঘুমায় রাজবালা, 

তাহারি গলে পরায়ে দিন্ু মাল! 


১৪ জ্যেষ্ঠ, ১২৯৯। 


স্রণ্তোশ্খিতা ॥ 


ঘুমের দেশে ভাঙ্গিল ঘুম, 
উঠিল কলস্বর ৷ 

গাছের শাখে জাগিল পাখী 
কুস্থমে মধুকর। 


অশ্বশীলে জাগিল ঘোড়া! 
হস্তীশালে হাতী। 

মল্পশালে মল্প জাগি” 
ফুলায় পুন ছাতি । 


জাগিল পথে প্রহরী দল, 
ছুয়ারে জাগে দ্বারী, 

আকাশে চেয়ে নিরখে বেলা 
জাগিয়া নর নারী । 


উঠিল জাগি” বাঁজাধিরাঁজ, 
জাগিল রাণীমাত। ! 

কচালি” আখি কুমার সাথে 
জাগিল ব্বাজভ্রাতা । 


-্০ 


সোনার তরী । 


নিভৃত ঘরে ধুপের বাস, 
রতন দীপ জ্বালা, 

জাগিয়া উঠি” শয্যাতলে 
স্বধাঁল রাজবাল। 

_-াকে পরালে মালা! 


খসিরা-পড়া' আঁচলখানি 
বক্ষে তুলি” দিল। 

আপন-পানে নেহাঁরি” চেয়ে 
সরমে শিহরিল! 


ত্রস্ত হয়ে চকিত-চখে 
চাহিল চারিদিকে 
বিজন গৃহ, রতন দীপ 
জ্বলিছে অনিমিখে ! 


গলার মালা খুলিয়া লষে 
ধরিয়। ছুটি করে 

সোনার স্তে যতনে গাঁথ। 
লিখনথানি পড়ে । 


পড়িল নাম, পড়িল ধাম, 
পড়িল লিপি তার, 

কোলের পরে বিছায়ে দিয়ে 
পড়িল শতবার ! 


স্প্তোথিতা। । ২১ 


শয়নশেষে রহিল বসে, 
ভাঁবিল ব্রাজবালা-_- 

-আপন ঘরে ঘুমায় ছিনু 
নিতান্ত নিরাল। 

কে পরালে মালা !-_ 


নৃতন-জাগা কুষ্তবনে 
কুহরি উঠে পিক, 

বসন্তের চুন্বনেতে 
বিবশ দশ দিক্‌! 


বাতাস ঘরে প্রবেশ করে 
ব্যাকুল উচ্ছ্বাসে, 

নব কুসুম মঞ্জরীর 
গন্ধ লয়ে আসে । 


জীাগিয়া উঠি বৈতালিক 
গাহিছে জক্সগগান, 

প্রাসাদদ্বারে ললিত স্বরে 
বাঁশিতে উঠে তান । 


শাতল ছাক্স। নদীর পথে 
কলসে লয়ে বাঁরি_- 

কাকন বাজে নুপুর বাজে-- 
চলিছে পুরনারী । 


শ২ 


সোনার তরী । 


কাননপথে মর্খ্মরিয়! 
কাপিছে গাছপালা, 
আধেক মুদি” নয়ন ছুটি 
ভাঁবিছে রাজবালা-_ 
কে পরালে মালা! 


বারেক মালা গলায় পরে 
বারেক লহে খুলি” 

ছইটি করে চাপিয়া ধরে 
বুকের কাছে তুলি” । 


শয়ন পরে মেলায়ে দিয়ে 
তৃষিত চেয়ে রয়, 

এমনি করে” পাইবে যেন 
অধিক পরিচয় । 


জগতে আজ কত না ধ্বনি 
উঠিছে কত ছলে, 

একটি আছে গোপন কা, 
সে কেহ নাহি 7.1! 


বাতাস শুধু কানের কাছে 
বহিয়া যাঁয় হুহু, 

কোকিল শুধু অবিশ্রাম 
ডাকিছে কুহু কুছ। 


স্প্তোথিতা। | ২৩ 


নিভৃত ঘরে পরাণ মন 
একাস্ত উতাল!, 
শয়নশেবে নীরবে বসে" 
ভাবিছে বাঁজবালা-_- 
কে পরালে মাল ! 


কেমন বীর-মুরতি তার 
মাধুরী দিয়ে মিশ1 ! 

দীপ্তিভর! নয়ন মাঝে 
তৃপ্তিহীন তৃষা ! 


স্থলে তারে দেখেছে যেন 
এমনি মনে লয়, 

ভুলিয়! গেছে, রয়েছে শুধু 
অসীম বিস্ময়! 


পারশে হেন বসিক্াছিল» 
ধরিয়াছিল কর, 

এখনো তার পরশে যেন 
সরস কলেবর ! 


চমকি” মুখ ছু'হাতে ঢাকে, 
সরমে টুটে মন, 

লজ্জাহীন প্রদীপ কেন 
নিভে নি সেইক্ষণ ! 


২৪ 


সোনার তরী । 


কণ্ঠ হতে ফেলিল হার 
যেন বিজুলিজালা, 
শয়ন পরে লুটায়ে পড়ে” 
ভাঁবিল রাঁজবাঁলা_ 
কে পরালে মালা! 


এমনি ধীরে একটি করে 
কাটিছে দিন বাঁতি। 

বসন্ত সে বিদায় নিল 
লইয়! যুখী জাতি। 


সঘন মেঘে বরষা আসে, 
বরষে ঝর ঝর । 

কাননে ফুটে নবমাঁলতী 
কদন্ব কেশর। 


স্বচ্ছ হাঁসি শরৎ আসে 
পুর্ণিমা-মালিকা। 

সকল বন আকুল করে 
শুভ্র শেফাঁলিক। 


আসিল শীত অঙ্গে লয়ে 
দীর্ঘ দুখ-নিশ। । 

শিশির-ঝর1 কুন্দ ফুলে 
হাসিয়া কাদে দিশ!। 


হৃপ্তোখিতা | ২৫ 


মাধবী মাস আবার এল 
বহিয়। ফুলডাঁল।। 

জানাল! পাশে একেলা বসে 
ভাবিছে রাজবাঁলা-_ 

কে পরালে মালা! 


১৫ জ্যেষ্ঠ, ১২৯৯। 


তোমরা এবং আমরা। 


ভোমরা হাসিয়া বহিয়া চলিয়া যাও 
কুলুকুলুকল নদীর শ্রোতের মত। 
আমর তীরেতে দীড়ায়ে চাহিয়া থাকি, 
মরমে গুমরি মরিছে কামনা কত। 
আপন! আপনি কানাকানি কর সুখে, 
কৌতুকছটা উছলিছে চোখে সুখে, 
কমল চরণ পড়িছে ধরণী মাঝে 
কনক নুপুর রিনিকি বিনিকি বাজে । 


অঙ্গে অঙ্গ বাধিছ রঙপাশে, 

বাহুতে বাহুতে জড়িত ললিত লতা, 
ইঙ্গিতরসে ধ্বনিয়া উঠিছে হাসি, 

নয়নে নয়নে বহিছে গোপন কথা । 
আজি নত করি একেলা গাঁথিছ ফুল, 
সুকুর লইয়। যতনে বাধিছ ল। 
গোপন হৃদয়ে আপনি সহ খেলা, 
কি কথা ভাঁবিছ, কেমনে কাটিছে বেলা! 


চকিতে পলকে অলক উড়িয়া পড়ে, 
ঈষৎ হেলিয়া আঁচল মেলিয়া যাও 
নিমেষ ফেলিতে আঁখি না মেলিতে, ত্বরা 
নয়নের আড়ে না জানি কাহারে চাও ! 


তোমর1 এবং আমরা । ২৭ 


যৌবনরাশি টুটিতে লুটিতে চায়, 
বসনে শাসনে বাধিয়া রেখেছ তায়। 
তবু শতবার শতধ! হইয়া ফুটে, 
চলিতে ফিরিতে ঝলকি চলকি উঠে ! 


আমরা মূর্খ কহিতে জানিনে কথা, 

কি কথ বলিতে কি কথা বলিয়া! ফেলি! 
অসময়ে গিয়ে লয়ে আপনার মন 

পদতলে দিয়ে চেয়ে থাকি আখি মেলি! 
তোমরা দেখিয়। চুপিচুপি কথা৷ কও, 
সখীতে সখীতে হাসিয়া অধীর হও ! 
বসন আঁচল বুকেতে টানিয়া! লগে 
হেসে চলে” যাঁও আশার অতীত হঃয়ে। 


আমরা বুহৎ অবোধ ঝড়ের মত 

আপন আবেগে ছুটিয়া চলিয়া আসি । 
বিপুল আধারে অসীম আকাশ ছেয়ে 

টুটিবারে চাহি আপন হদয়রাঁশি । 
তোমরা বিজুলি হাসিতে হাসিতে চাঁও, 
আধার ছেদিয়া মরম বিধিয়। দাও, 
গগনের গাঁয়ে আগুনের রেখ! আঁকি 
চকিত চরণে চলে” বাও দিয়ে ফাঁকি । 


২৮ 


সোনার তরী । 


অযতনে বিধি গড়েছে মোদের দেহ, 
শয়ন অধর দেয়নি ভাষায় ভরে», 
মোহন মধুর মন্ত্র জানিনে মোরা, 
আপনা প্রকাশ করিব কেমন করে”? 
তোমরা কোথায় আমর! কোথায় আছি! 
কোন সুলগনে হব না কি কাছাকাছি! 
তোমরা হাসিয়! বহিয়! চলিয়া যাবে, 
আমর! দীড়ায়ে রহিব এমনি ভাবে! 


১৬ জ্োষ্ঠ, ১২৯৯। 


দোনার বাঁধন । 


বন্দী হয়ে আছ তুমি স্থমধুর স্নেহে, 
অগ্নি গৃহলক্ষি, এই করুণ-ক্রন্দন 

এই ছুঃখ দৈন্ভে ভরা! মানবের গেহে; 
তাই ছুটি বাহু পরে স্ুন্দর-বন্ধন 

সোনার কঙ্কণ ছুটি বহিতেছ দেহে 

শুভ চিহ্ন, নিখিলের নয়ন-নন্দন। 
পুরুষের ছুই বাহু কিণাঙ্ক-কঠিন 
সংসার সংগ্রামে, সদা বন্ধনবিহীন 

যুদ্ধ দ্বন্দ যত কিছু নিদারুণ কাজে 
বহবাণ বজ্সম সর্বত্র স্বাধীন । 

তুমি বদ্ধ স্েহ প্রেম করুণার মাঝে, 
শুধু শুভকর্ম, শুধু সেবা নিশি দিন। 
তোমার বাহুতে তাই কে দিয়াছে টানি, 
ছুইটি পোনার গণ্ভী, কাঁকন ছু'খানি। 


১৭ জ্যোষ্ঠ, ১২৯৯। 


বর্ষা যাপন । 


রাজধানী কলিকাতা; তেতলার ছাঁতে 
কাঠের কুঠরি এক ধারে; 

আলো! আসে পুর্ব দিকে প্রথম প্রভাতে 
বায়ু আসে দক্ষিণের দ্বারে । 


মেঝেতে বিছানা পাতা, দুয়ারে রাখিয়। মাথা, 
বাহিরে আঁখিরে দিই ছুটি, 

সৌধ-ছাঁদ শত শত ঢাঁকিয়া রহস্ত কত, 
আকাশেরে করিছে ভ্রকুটি। 

নিকটে জানালা গায় এক কোণে আলিশায় 

একটুকু সবুজের খেলা, 

শিশু অশথের গাছ আপন ছায়ার নাচ 
সারাদিন দেখিছে একেল। । 

দিগন্তের চারি পাশে আষাঢ় নামিয়। আসে, 
বর্ষা আসে হইয়া ঘোরালে', 

সমস্ত আকাশ যৌড়। গরজে হজ্জের ঘোড়া 

চিকৃমিকে বিছ্যতের আলো।। 

চারি দ্রিকে অবিরল ঝর ঝর বুষ্টি জল 
এই ছোট প্রাস্ত ঘরটিরে 

দেয় নির্বাসিত করি”_ দশদিক অপহরি”,-- 
সমুদয় বিশ্বের বাহিরে । 


বর্ষ যাপন । 


বসে বসে সঙ্গীহীন ভাল লাগে কিছুপ্দিন 
পড়িবারে মেঘদূত কথা 

_ বাহিরে দিবস রাতি বায়ু করে মাতামাতি 
বহিয়া বিফল ব্যাকুলত1 ;-- 

বহু পূর্ব আষাঢ়ের মেঘাচ্ছন্ন ভারতের 
নগ নদী নগরী বাহিয়! 

কত শ্রুতিমধু নাম কত দেশ কত গ্রাম 
দেখে যায় চাহিয়! চাহিয়া; 

ভাল করে” দৌহে চিনি, বিরহী ও বিরহিণী 
জগতের ছু'পারে ছু'জন, 

প্রাণে প্রাণে পড়ে টান, মাৰে মহ! ব্যবধান, 
মনে মনে কল্পনা স্বজন ; 

যক্ষবধূ গৃহকোণে ফুল নিয়ে দিন গণে 
দেখে শুনে ফিরে আসি চলি” । 

বর্ষা আসে ঘন রোলে, যত্বে টেনে লই কোলে 
গোবিন্দদাসের পদাবলী । 

সুর করে' বারবার পড়ি বর্ষা অভিসাঁর ;-- 
অন্ধকার যমুনার তীর,__ 

নিশীখে নবীনা রাধা নাহি মানে কোন বাধা, 
খু'জিতেছে নিকুঞ্জকুটার ; 

অনুক্ষণ দর দর বারি ঝরে ঝর ঝর 
তাহে অতি দূরতর বন, 

ঘরে ঘরে রুদ্ধ দ্বার সঙ্গে কেহ নাহি আর 
শুধু এক কিশোর মদন । 


৩৯ 


৩২ 


/৯ ০ 


সোনার তরী । 


আষাঢ় হতেছে শেষ, মিশায়ে মল্লার দেশ 
রচি “ভর বাদরের” স্থর। 

খুলিয়! প্রথম পাতা, গীতগোবিন্দের গাথা 
গাহি “মেঘে অন্বর মেহুর |” 

স্তব্ধ রাত্রি দ্বিপ্রহরে ঝুপ্‌ ঝুপ্‌ বৃষ্টি পড়ে 
শুয়ে শুয়ে স্থখ-অনিদ্রায় 


“রজনী সাঙন ঘন ঘন দেয়াগরজন” 
সেই গান মনে পড়ে” যাঁয়। 

“পালস্কে শয়ান রঙ্গে বিগলিত চীর অঙ্গে” 
মন স্থখে নিদ্রায় মগন,_ 

সেই ছবি জাঁগে মনে পুরাতিন বুন্দাবনে 
রাধিকার নির্জন স্বপন । 

মুছু মুছ্ু বহে শ্বাস, অধরে লাগিছে হাঁস 


কেঁপে উঠে মুদিত পলক, 
বাহুতে মাথাটি থুয়ে, একাকিনী আছে শুয়ে, 
গৃহ কোণে মান দীপালোক) 
গিরিশিরে মেঘ ডাকে, বৃষ্টি ঝরে তরু শাখে, 
& দাঁছুরী ডাঁকিছে সারারান্তি.-- 
হেন কালে কি না ঘটে! এ সময়ে আসে বটে 
একা ঘরে স্বপনের সাঁঘী। 


মরি মরি স্বপ্ন শেষে পুলকিত রসাবেশে, 
যখন সে জাগিল একাকী, 
দ্রেখিল বিজন ঘরে দীপ নিবু-নিবু করে 


প্রহরী প্রহর গেল হাঁকি ;_ 


বর্ধা যাপন । 


বাড়িছে বৃষ্টির বেগ, থেকে থেকে ভাঁকে মেঘ, 
বিল্লিরব পৃথিবী ব্যাপিক়্া, 

সেই ঘনঘোর। নিশি স্বপ্নে জাগরণে মিশি” 
না জানি কেমন করে হিয়া! 


লয়ে পুঁথি ছু'চারিটি নেড়ে চেড়ে ইটি সিটি 
এই মতে কাটে দিনরাঁত। 

তার পরে টানি লই বিদেশী কাব্যের বই 
উলটি পাঁলটি দেখি পাত ;-_ 

কোথারে বর্ষার ছায়া, অন্ধকার মেঘ মায়া, 
ঝর ঝর ধ্বনি অহরহ ! 

কোথায় সে কর্মহীন একান্তে আপনে লীন 
জীবনের নিগুঢ় বিরহ ! 

বর্ষার সমান স্থরে অন্তর বাহির পুরে” 
সঙ্গীতের মুষল ধারায় 

পরাণের বহুদূর কুলে কুলে ভরপুর,-_ 
বিদেশী কাব্যে সে কোথা হায়! 

তখন সে পুথি ফেলি, ছুয়ারে আসন মেলি, 
বসি গিয়ে আপনার মনে, 

কিছু করিবার নাই চেয়ে চেয়ে ভাবি তাই 
দীর্ঘ দিন কাটিবে কেমনে! 

মাথাটি করিয়! নিচু বসে" বসে” রচি কিছু 
বহু যত্তে সারাদিন ধরে”,__ 


৩৩ 


নখ 


৩৪ 


মৌনার তরী । 


ইচ্ছা করে অবিরত আপনার মনোমত 
গল্প লিথি একেকটি করে? | ' 


_ ছোট প্রাণ, ছোট ব্যথা, ছোট ছোট ছঃখ কথা 


নিতা নিতান্তই সহজ সরল; 


সহঅ বিশ্বৃতিরাশি__ প্রত্যহ যেতেছে ভাসি 
বি হাতিনা প্রত্যহ যেতেছে ভা? 
তারি ছু'চারিটি অশ্রজল ৷ 
পাস টিটি পপর 
নাহি বর্ণনার ছটা, ঘটনার ঘত্রত্রটা, 
স্পা আপ পলাশ 


নাহি তত্ব নাহি উপদ্রেশ। 


অন্তরে অতৃপ্তি রবে সার্গ করি” মনে হবে 


শেষ হয়ে হইল না শেষ), 

জগতের শত শত, অসমাপ্ত কথা ঘত, 
অকালের বিচ্ছিন্ন মুকুল, 

অজ্ঞাত জীবনগুলা, অধ্যাত কীন্তির ধুলা, 
কত ভাব, কত ভয় ভুল 

সংসারের দশদ্িশি ঝরিতেছে অহনিশি 
ঝর ঝর বর্ষার মত-- 

ক্ষণ-অশ্রু ক্ষণ-হাসি পড়িতেছে রাশি রাশি 
শব্ধ তার শুনি অবিরত । 

সেই সব হেলাফেলা, নিমিষে, লীলা খেলা 
চারিদিকে করি স্তপাকার 

তাই দিয়ে করি স্থষ্ট একটি বিশস্থৃতি বৃষ্টি 
জীবনের শ্রাবণ নিশার । 


১৭ জ্যেষ্ঠ, ১২৯৯ 


এ 


হিং টিং ছট্‌। 
( স্বপ্নমঙ্গল ) 


হ্প্র দেখেছেন রাত্রে হবুচন্দ্র ভূপ,- 

অর্থ তার ভাবি” ভাবি” গবুচন্দ্র চুপ! 
শিয়রে বসিয়া যেন তিনটে বাদরে 

উকুন বাছিতেছিল পরম আদরে 

একটু নড়িতে গেলে গালে মারে চড় 

চখে মুখে লাগে তার নখের আঁচড়। 

সহসা মিলাল তা'রা এল এক বেদে, 
“্পাঁথী উড়ে” গেছে” বলে, মরে কেঁদে কেঁদে ; 
সম্মুখে রাজারে দেখি তুলি নিল ঘাড়ে, 
ঝুলায়ে বসায়ে দিল উচ্চ এক দড়ে। 
নীচেতে দ্রাড়ায়ে এক বুড়ি থুড়, খুড়ি, 
হাসিয়া পায়ের তলে দেয় সুড়সুড়ি । 

রাজা বলে “কি আপদ!” কেহ নাহি ছাড়ে, 
পা ছু'ট। তুলিতে চাহে, তুলিতে না পারে। 
পাথীর মতন রাজা করে ঝট্পট্‌»__ 

বেদে কানে কানে বলে--হিং টিং ছটু 1”. 
স্বপ্নমঙ্গলের কথা৷ অমৃত সমাঁন, 

গৌড়ানন্দ কবি ভণে, শুনে পুণ্যবাঁন্‌! 


হবুপুর রাজ্যে আজ দিন ছয় সাত 
চখে কারো নিদ্রা নাই, পেটে নাই ভাত। 


৩৬ 


সোনার তরী । 


শীর্ণ গালে হাত দিয়ে নত করি' শির 
রাজ্যন্থদ্ধ বাঁলবৃদ্ধ ভেবেই অস্থির। 
ছেলের] ভূলেছে খেলা, পণ্ডিতের! পাঠ, 
মেয়েরা করেছে চুপ--এতই বিভ্রাট ! 
সারি সারি বদে” গেছে কথা নাই মুখে, 
চিন্তা যত ভারি হয় মাথা পড়ে ঝু'কে। 
ভূইফৌড়া তত্ব যেন ভূমিতলে খোঁজে, 
সবে যেন বসে' গেছে নিরাকার ভোজে! 
মাঝে মাঝে দীর্ঘশ্বাস ছাড়িয়। উৎকট 
হঠাৎ ফুকাঁরি উঠে__“হিং টিং ছট্‌।” 
স্বপ্রমূঙ্জলের কথা অমৃত সমান, 
গৌড়ানন্দ কৰি ভণে, শুনে পুণ্যবান্‌! 


ক 


চারিদিক হতে এল পণ্ডিতের দল, 
অযোধ্যা কনোজ কাঞ্ধী মগধ কোশল ; 
উজ্জয়িনী হতে এল বুধ-অবতংস্-_ 
কালিদাস কবীন্দ্রের ভাগিনেয়বংশ 
মোটা মোটা পুঁথি লয়ে উলটায় পাঁত 
ঘন ঘন নাড়ে বসি, টিকিস্দ্ধ মাথা! 
বড় বড় মন্তকের পাকা শস্তক্ষেত 
বাতাসে ছুলিছে যেন শীর্ষ-সমেত ! 

কেহ শ্রুতি, কেহ স্থৃতি, কেহ বা! পুরা 
কেহ ব্যাকরণ দেখে, কেহ অভিধান; 


হিং টিং ছট্। ৩৭ 


কোনখানে নাহি পায় অর্থ কোনরূপ, 
বেড়ে ওঠে অন্ুস্বর বিসর্গের স্তুপ ! 

চুপ করে” বসে” থাকে বিষম সঙ্কট, 

থেকে থেকে হেঁকে ওঠে_-হিং টিং ছট 1” 
স্বপ্নীমঙ্গলের কথা অমৃত সমান, 

গোৌড়ানন্দ কৰি ভণে, শুনে পুণ্যবান্‌ ! 
কহিলেন হতাশ্বাস হবুচন্ত্র রাজ-_ 

রঃ ।*স্রেচ্ছদেশে আছে নাকি পণ্ডিতসমাঁজ ! 

% ৷ তাহাদের ডেকে আন যে যেখানে আছে-_ 
অর্থ যদ্দি ধরা পড়ে তাহাদের কাছে ।-__ 
কটাচুল নীলচস্ষু কপিশ কপোঁল, 

যবন পণ্ডিত আসে, বাজে ঢাক ঢোল । 
গায়ে কালে! মোটা মোটা ছাঁটাছেৌটা কুস্তি, 
শ্ীক্মতাপে উদ্মা বাড়ে, উর্মরি উত্রমুণ্তি ! 
ভূমিকা না করি” কিছু ঘড়ি খুলি” কর-_ 
“সতেরে। মিনিট মাত্র রয়েছে সময়, 
কথা*যদি থাকে কিছু বল চটপট 1” 
সভান্দ্ধ বলি” উঠে “হিং টিং ছট. 1» 
স্বপ্রমঙ্গলের কথা অমৃত সমান, 

গৌড়ানন্দ কবি ভণে, শুনে পুণ্যবান্‌! 


স্বপ্ন শুনি শ্লেচ্ছমুখ রাঙা টক্টকে, 
আগুন ছুটিতে চায় সুখে আর চখে ! 


৪ 


৩৮ 


সোনার তরী । 


হানিয়। দক্ষিণ মুষ্টি বাম করতলে 

“ডেকে এনে পরিহাস” ৫রেগেমেগে বলে 17 
ফরাসী পণ্ডিত ছিল, হাঁস্তোজ্জলমুথে 
কহিল নোয়ায়ে মাথা, হস্ত রাখি বুকে-_ 
“স্বপ্ন যাহা শুনিলাম রাঁজযোগ্য বটে ; 
হেন স্বপ্র সকলের অদুষ্টে না ঘটে ! 

কিন্ত তবু স্বপ্ন ওট1 করি অনুমান 

যদিও রাজার শিরে পেয়েছিল স্থান ! 
অর্থ চাই রাজকোষে আছে ভূরি ভূরি, 
রাঁজস্বপ্পে অর্থ নাই, যত মাথা খুঁড়ি ! 
নাই অর্থ কিন্ত তবু কহি অকপট 
শুনিতে কি মিষ্ট আহা_হিং টিং ছট্‌ !” 
স্বপ্নমঙগলের কথা অমৃত সমান, 
গোৌড়ানন্দ কবি ভণে, শুনে পুণ্যবান্‌! 


শুনিয়া সভাস্থ সবে করে ধিক্‌ ধিক্‌-- 
কোথাকার গণ্ডমুর্খ পাষণ্ড নাস্পিক ! 
স্বপ্ন শুধু স্বপ্রমাত্র মন্তিফ-বিকাঁর, 

এ কথা কেমন করে” করিব স্বীকার ! 
জগৎ্বিখ্যাত মোর! “ধর্মপ্রাণ” জাতি ! 
স্বপ্ন উড়াইয়া৷ দিবে !-_ছুপপুরে ডাকাতি ! 
হবুচন্দ্র রাজা কহে পাকালিয়া চোখ-_ 
“গবুচন্দ্র, এদের উচিত শিক্ষা হোক ! 


হিং টিং ছট্‌। ৩৯ 


হেঁটোয় কণ্টক দাও, উপরে কণ্টক, 
ডালকুভাদের মাঝে করহ বণ্টক !” 
সতেরো মিনিট কাল না হইতে শেষ, 
শ্লেচ্ছ পণ্ডিতের আর না! মিলে উদ্দেশ । 
সভাস্থ সবাই ভাসে আনন্দাশ্রনীরে, 
ধর্মরাজ্যে পুনর্বার শাস্তি এল ফিরে। 
পণ্ডিতের! মুখ চক্ষু করিয়া বিকট 
পুনর্বার উচ্চারিল “হিং টিং ছট্‌ 1” 
স্বপ্রমঙ্ষলের কথা অমৃত সমান, 
গৌড়ানন্দ কবি ভণে, শুনে পুণ্যবান্‌ ! 


অতঃপর গোঁড় হতে এল হেন বেল! 
যবন প্ডিতদের গুরুমারা চেলা। 
নগ্রশির, সঙ্জ নাই, লজ্জা নাই ধড়ে-_ 
কাছা কৌচা শতবার খসে” খসে” পড়ে। 
অস্তিত্ব আছে না আছে, ক্ষীণ খর্বদেহ, 
বাক্য যবে বাহিরায় না থাকে সন্দেহ! 
দেখিয়া বিশ্বের লাগে বিষম বিন্ময় । 

না জানে অভিবাদন, না পুছে কুশল, 
পিতৃনাম শুধাইলে উদ্যত মুষল। 

সগর্কে জিজ্ঞাসা করে “কি লয্ষে বিচার ! 
শুনিলে বলিতে পারি কথ ছুই চার; 


সোনার তরী । 


ব্যাখ্যায় করিতে পারি উলট্পাঁলট্‌ 1” 
সমস্বরে কহে সবে-_হিং টিং ছট্!” 
স্বপ্রমঙ্গলের কথা অমৃত সমান, 

গৌড়ানন্দ কবি ভণে, শুনে পুণ্যবান্‌ ! 


স্বপ্নকথা শুনি মুখ গম্ভীর করিয়! 
কহিল গৌড়ীয় সাধু প্রহর ধরিয়া, 
“নিতাণ্চ সরল অর্থ, অতি পরিক্ষার, 
বহু পুরাতন ভাব, নব আবিষ্কার । 
্র্্বকের ত্রিনয়ন ত্রিকাল ত্রিগুণ 
শক্তিভেদে ব্যক্তিভেদ দ্িগুণ বিগুণ। 
বিবর্তন আবর্তন স্বর্তন আদি 
জীবশক্তি শিবশক্তি করে বিসম্বাদী। 
আকর্ষণ বিকর্ষণ পুরুষ প্রকৃতি 

আণব চৌম্বক বলে আকুতি বিকৃতি । 
কুশাগ্রে প্রবহমান জীবাত্ম বিদ্যুৎ 
ধারণ! পরমা শক্তি সেথায় উদ্ভৃত। 
ত্রয়ী শক্তি ত্রিস্বরূপে প্রপঞ্চে প্রক্ষ ৪ 
সংক্ষেপে বলিতে গেলে “হিং টং ছট্! 
স্বপ্নমঙ্গলের কথা অমৃত সমান, 
গোৌড়ানন্দ কবি ভণে, শুনে পুণ্যবান্‌ ! 


সাধু সাধু সাধু রবে কাপে চারিধার, 
সবে বলে--পরিকাঁর-__অতি পরিক্ষার ! 


হিং টিং ছট্‌। ৪১ 


ছুর্ধোধ যা কিছু ছিল হয়ে গেল জল, 
শূন্য আকাশের মত অত্যন্ত নির্মল! 
ইাঁপ ছাড়ি উঠিলেন হবুচন্দ্র রাজ, 
আপনার মাথা হতে খুলি লয়ে তাঁজ 
পরাইয়া দিল ক্ষীণ বাঙ্গালীর শিরে, 
ভাঁরে তাঁর মাথাটুকু পড়ে বুঝি ছিড়ে” ! 
বহুদিন পরে আজ চিন্তা গেল ছুটে, 
হাবুডুবু হবু রাজ্য নড়ি চড়ি উঠে। 
ছেলেরা ধরিল খেলা, বুদ্ধেরা তামুক, 
এক দণ্ডে খুলে গেল রমণীর মুখ । 
দেশযৌড়া মাথাঁধরা ছেড়ে গেল চট, 
সবাই বুঝিয়া গেল-__হিং টিং ছট্‌! 
স্বপ্নমঙ্গলের কথা অমৃত সমান, 
গৌড়ানন্দ কবি ভণে, শুনে পুণ্যবান্‌! 


পপি 


যে শুনিবে এই স্বপ্রমজলের কথা, 

সর্বত্রম ঘুচে যাবে নহিবে অন্যথা । 

বিশ্বে কু বিশ্ব ভেবে হবে না ঠকিতে; 
সত্যেরে সে মিথ্যা বলি” বুঝিবে চকিতে । 
যা আছে তা নাই, আর, নাই যাহা আছে, 
এ কথা জীজ্জল্যমান হবে তার কাছে। 
সবাই সরলভাবে দেখিবে যা কিছু, 

সে আপন লেজুড় জুড়িবে তার পিছু । 


৪২ 


সোনার তরী । 
এস তাই, তোল হাই, শুয়ে পড় চিত, 
অনিশ্চিত এ সংসারে এ কথ! নিশ্চিত-_ 
জগতে সকলই মিথ্য। সব মায়াময় 
স্বপ্ন শুধু সৃত্য আর সত্য কিছু নয়। 


সবপ্নমঙ্গলের কথা৷ অমৃত সমান, 
গৌড়ানন্দ কৰি ভণে, শুনে পুণ্যবান্‌। 


১৮ জৈোন্ঠ, ১২৯৯। 


'পরশ-পাথর | 


ক্ষ্যাপা খুঁজে খুঁজে ফিরে পরশ-পাথর। 


মাথায় বৃহৎ জট! ধুলায় কাদায় কটা, 
মলিন ছায়ার মত ক্ষীকলেবর। ৫.২: 

ওষ্ঠে অধরেতে চাঁপি অন্তরের দ্বার কাম 4 
রাত্রিদিন তীব্র জাল জেলে রাখে চোঁখে। 

ছুটে! নেত্র সদ! যেন নিশার খগ্ভোৎ হেন 
উড়ে" উড়ে” খুঁজে কারে নিজের আলোকে । 

নাহি যাঁর চাল চুলা গায়ে মাথে ছাই ধুলা, 
কটিতে জড়ানো শুধু ধূদর কৌপীন, 

ডেকে, কথা কয় তারে কেহ নাই এ সংসারে, 
পথের ভিথারী হতে আরো দীনহীন, 

তার এত অভিমান, সোনারূপা তুচ্ছজ্ঞাঁন, 
রাজসম্পদের লাগি” নহে সে কাতর, 

দশা দেখে" হাঁসি পায়, আর কিছু নাহি চায় 


একেবারে পেতে চায় পরশ-পাথর ! 


সন্থুথে গরজে সিন্ধু অগাধ অপার। 
তরঙ্গে তর উঠি, হেসে হল কুটিকুটি 
সট্িছাড়া পাগলের দেখিয়া ব্যাপার! 


8৪ পৌনার তরী । 


আকাশ রয়েছে চাহি, নয়নে নিমেষ নাহি, 
হুহু করে, সমীরণ ছুটেছে অবাধ । 
সূর্য্য ওঠে প্রাতঃকালে পূর্ব গগনের ভালে 


সন্ধ্যাবেলা ধীরে ধীরে উঠে আসে টাঁদ। 
জলরাশি অবিরল করিতেছে কলকল 
অতুল রহস্ত যেন চাহে বলিবারে 
কাম্যধন আছে কোথা জানে যেন সব কথা, 
সে ভাষা যে বোঝে সেই খুঁজে নিতে পারে। 
কিছুতে জক্ষেপ নাহি, মহাগাথা গাঁন গাহি, 
সমুদ্র আপনি শুনে আপনার স্বর । 
কেহ যাঁর, কেহ আসে, কেহ কাদে, কেহ হাসে, 
ক্ষ্যাপা তীরে খুঁজে ফিরে পরশ-পাথর ! 


৮... একদিন, বহুপুর্বে, আছে হাতিহাস__ | 
» নিকষে সোনার রেখা সবে যেন দিল দেখা 
আকাশে প্রথম স্থষ্টি পাইল প্রকাশ; 
মিলি” যত স্ুরাস্ুর কে'সহলে ভরপুর 
এসেছিল পা টিপিয়া এই সিন্কুত।রে, 
অতালের পানে চাহি নয়নে নিমেষ নাহি 
নীরবে দীড়ায়ে ছিল স্থির নতশিরে ) 
বহুকাল স্তব্ধ থাকি শুনেছিল মুদে” আখি 
এই মহাঁসমুদ্রের গীতি চিরন্তন ; 
তার পরে কৌতুহলে ঝাপায়ে অগাঁধ জলে 
করেছিল এ অনন্ত রহস্ত মন্থন। 


পরশ-পাখর । ৪৫ 


বহুকাঁ: ছুঃখ সেবি নিরখিল, লক্মীদেবী 
উদ্দিলা জগতমাঝে অতুল সুন্দর । 
সেই সুমুদ্রের তীরে শীর্ণদেহে জীর্ণচীরে 


ক্ষ্যাপা খুঁজে” খুঁজে” ফিরে পরশ-পাথর ! 


এতদিনে বুঝি তাঁর ঘুচে গেছে আশ। 

খুঁজে? খুঁজে, ফিরে তবু. বিশ্রাম না জানে কভু, 
আশা গেছে, যাঁয় নাই খোঁজার অভ্যাঁস। 

বিরহী বিহঙ্গ ডাকে সারানিশি তরুশাখে, 
যারে ডাকে তার দেখা পায় না অভাগা ! 

তবু ডাকে সারাদিন আশাহীন শ্রাস্তিহীন 
একমাত্র কাঁজ তাঁর ডেকে ডেকে জাগা” । 

আর সব কাজ ভুলি? আকাশে তরঙ্গ তুলি, 
সমুদ্র না জানি কারে চাহে অবিরত! 

যত করে হায় হায়, কোন কালে নাহি পায় 
তবু শূন্যে তোলে বাহু, ওই তাঁর ব্রত। 

কারে চাহি ব্যোমতলে গ্হতাঁরা লয়ে চলে, 
অনন্ত সাধনা করে বিশ্বচরাচর ! 

সেই মত সিদ্কুতটে ধূলিমাখা! দীর্ঘজটে 
ক্ষ্যাপা খুঁজে খুঁজে ফিরে পরশ-পাথর ! 


একদ। শুধাল তারে গ্রামবাঁী ছেলে 
“সন্ন্যাপীঠাকুর এ কি! ককালে ওকিও দেখি! 


৪৬ সোনার তরী । 


দোনার শিকল তুমি কোথা হতে পেলে ?” 


সন্ন্যাসী চমকি ওঠে, শিকল সোনার বটে, 
লোহা সে হয়েছে মোনা জানে না কথন। 

একি কাণ্ড চমতকার, তুলে দেখে বারবার, 
আখি কচালিয়! দেখে, এ নহে স্বপন! 

কপালে হানিয়া কর ব'দে পড়ে ভূমিপর, 
নিজেরে করিতে চাহে নিদ্দর় লাগ্চন।১- 

পাগলের মত চাক্স-- কোথা গেল, হায় ভায়, 
ধরা দিয়ে পলাইল সফল বাপ্র'না । 

কেবল অভ্যাসমত হড়ি কুড়াইত কত 
ঠন্‌ করে' ঠেকাইত শিকলের পর, 

চেয়ে দেখিত না, হ্থড়ি দুরে ফেলে দিত ছুড়ি' 


কখন্‌ ফেলেছে ছু'ড়ে' পরশ-পাথর ! 


তথন যেতেছে অস্তে মলিন তপন । 


আকাশ সোণার বর্ণ, সঃ দ গলিত স্বর্ণ 
পশ্চিম দিপ্বধু দেখে সোনার ক". ৭! 

সন্্যাসী আবার ধীরে পূর্বপথে যায় ফিরে 
খু'ঁজিতে নূতন করে? হারানো রতন। 

সে শকতি নাহি আর নুয়ে পড়ে দেহভার 
অন্তর লুটায় ছিন্ন তরুর মতন। 

পুরাতন দীর্ঘপথ পড়ে, আছে মৃতবৎ 


হেথা হতে কতদূর নাহি তাঁর শেষ! 


পরশ-পাথর । ৪৭ 


দিক্‌ হতে দিগন্তরে মরুবালি ধৃধু করে, 
আসন্ন রজনী-ছায়ে ম্লান *সর্ববদেশ । 

অদ্ধেক জীবন খুঁজি? কোন্‌ ক্ষণে চক্ষু বুজি' 
স্পর্শ লভেছিল যার এক পলভর, 

বাকি অদ্ধ ভগ্ন প্রাণ আবার কৰিছে দান 
ফিরিয়া খু'ঁজিতে মেই পরশ-পাথর । 


সন 


১৯ ছ্ধ্যেষ্ঠ, ১২৯৯ । 


বৈষব-কবিতা। 


| /. ও 
শুধু বৈকুণ্ঠের তরে বৈষ্ণবের গান! 

॥ পূর্বরাগ, অনুরাগ, মান অভিমান, 

(অভিসার, প্রেমলীলা, বিরহ মিলন, 
বৃন্দাবন-গাঁথা)--এই প্রণক-স্বপন 
শ্রাবণের শর্ধরীতে কালিন্দীর কুলে, 
চাঁরি চক্ষে চেয়ে দেখা কদম্বের মূলে 
সরমে সন্ত্রমে,এ.কি শুধু দেবতার ! 

, ২ এ সঙ্গীত-রসধারা নহে মিটাবার 

দীন মর্ত্যবাপী এই নরনারীদের 
প্রতি রজনীর আর প্রতি দিবসের 
তগ্ত প্রেম-তৃষা ! 


এ গীত-উতৎ্.7 মাঝে 
শুধু তিনি আর ভক্ত নিক্ত -ং বিরাজে 7 
ঈাড়ায়ে বাহির দ্বারে মোরা নরনারী 
উত্স্থক শ্রবণ পাতি” শুনি যদি তারি 
ছয়েকটি তান,_-দূর হ'তে তাই শুনে, 
তরুণ বসন্তে ষদি নবীন ফাল্তুনে 
অন্তর পুলকি” উঠে) শুনি সেই স্তর 
সহসা দেখিতে পাই দ্বিগুণ মধুর 


বৈষ্ব-কবিতা । ৪৯ 


আমাদের ধরা )১-_মধুময় হয়ে উঠে 
আমাদের বনচ্ছায়ে যে নদীটি ছুটে, 
মোদের কুটার-প্রান্তে যে কদন্ব ফুটে 
বরষার দিনে ;১--সেই প্রেমাতুর তানে 
যদি ফিরে চেয়ে দেখি মোর পার্খপানে 
ধরি মোর বামবাহু রয়েছে দাড়ায়ে 
ধরার সঙ্গিনী মোর, হৃদয় বাড়ায়ে 

মোর দিকে, বহি নিজ মৌন ভালবাসা; 
ওই গানে যদি বা সে পায় নিজ ভাষা, 78৮৩ 
বদি তার মুখে ফুটে পূণ প্রেমজ্যোতি, 
তোষার কি তার, বন্ধু, তাহে কার ক্ষতি? 


সত্য করে' কহ মোরে, হে বৈষুব কবি, 
(কোথা ভুমি পেয়েছিলে এই প্রেমছবি, 9 
কোথা তুমি শিখেছিলে এই প্রেমগান 
বিরহ-তাপিত ? হেরি কাহার নয়ন, 
রাধিকার অশু-আখি পড়েছিল মনে? 
বিজন বসশ্রাতে নিলন-শয়নে 

কে তোমারে বেধেছিল ছুটি বাহুডোরে, 
আপনার হদয়ের অগাধ সাগরে 
রেখেছিল অগ্র করি! এত প্রেমকথা, 
রাধিকার চিত্ত-দীর্ণ তীব্র ব্যাকুলতা 

চুরি করি” লইয়াছ কার মুখ, কার 
আখি হ'তে! আজ তার নাহি অধিকার 


৫ 


এল হিপ 


সোনার তরী । 


সে সঙ্গীতে ! তারি নারী-জদয়-সঞ্চিত 
তার ভাষা হ'তে তারে করিবে বঞ্চিত 
চিরদিন ! 


আনাদেরি কুটার-কাননে 
ফুটে পুষ্প, কেহ দেয় দেবতা-চরণে, 
কেহ রাখে প্রিয়জন তর্ে-ভাহে ভার 
নাহি অসন্তোষ ! এই প্রেম গতি-হার 
গাথা হয় নর-নারী-মিলন-মেলায় 
কেহ দেয় ভারে, কেহ বধুর গলায়! 
দেবভারে যাহা দিতে পারি, দিই তাই 


 প্রিয়জনে -প্রিক্ষজনে বাহ এ পাই 
| তাই দিই দেবতাবরে; আর পাব কোথা? 


দেবতারে প্রিয় করি, নী দেবভা ' 


বৈষ্ণব কবির গাণা প্রেমউপহ ব 
চলিয়াছে নিশিদিন কত ভা. ভার 
বৈকুণ্ঠের পথে । মধাপথে নরনারী 
অক্ষয় সে স্ুধ্রাশি করি কাড়াকাড়ি 
লইতেছি আপনার প্রিন্ধ গৃহতরে 
যথাসাধ্য বে যাহার , যুগে খগাস্তবে 
চিরদিন পৃথিবীতে যুবকধুক্তী 
নরনারী এমনি চঞ্চল মতিগরি। 


বৈষ্ণব-কবিতা। ৫১ 


ছুই পক্ষে মিলে একেবারে আত্মহারা 
অবোধ অজ্ঞান। সৌনর্ষযের দস্থ্য তারা 
লুটে-পুটে নিতে চায় সব! এত গীতি, 
এত ছন্দ, এত ভাবে উচ্ছাসিত প্রীতি, 
এত মধুরতা দ্বারের সম্মুখ দিয়! 

বহে? যায়--তাই তারা পড়েছে আসিয়! 
সবে মিলি কলরবে সেই সুধাস্রোতে। 
সমুদ্রবাহিনী সেই প্রেমধারা হ'তে 
কলস ভরিয়া তারা ল'য়ে যায় তীরে 
বিচার না করি কিছু, আপন কুটারে 
আপনার তরে ! তুমি মিছে ধর দোষ, 
হে দাধু পঞ্ডিত, মিছে করিতেছ রোদ! 
বার ধন তিনি ওই অপার সন্তোষে 
অনীম স্নেহের হাসি হাশিছেন বসে?! 


১৮ আঘাঢ়, ১২৯৯ 


ই পাখী । 


বনের পাখী ছিল বনে। 

একদ! কি করিয়া মিলন হল দৌহে, 
কি ছিল বিধাতার মনে ! 

বনের পাখী বলে, খাঁচার পাখী ভাই 
বনেতে যাই (হে মিলে । 

খাঁচার পাখী বলে, বনের পাখী আয় 
খাঁচায় থাকি নিরিবিলে। 

বনের পাখী বলে-_না, 

আমি শিকলে ধর! নাহ দিব! 
খাঁচার পাথী বলে- হায় 

আমি কেমনে বনে বাহিরিব ! 


বনের পাখী গাছে বাহিরে »'স বসি 
বনের গান ছিল যণ্চ 

থাচার পাথী পড়ে শিখানো বুলি তার 
দোহার ভাষ; ছুই মত। 

বনের পাখী বলে, খাঁচার পাখী ভাই 
বনের গান গাও দিখি। 

খাঁচার পাখী বলে বনের পাখী ভাই 
খাচার গান লহ শিখি। 


ছুই পাখী। ৩ 


বনের পাখী বলে-_ন1, 
আমি শিখানো গান নাহি চাই, 
খাঁচার পাখী বলে- হায় 
আমি কেমনে বন-গান গাই! 


বনের পাখী বলে আঁকাঁশ ঘননীল 
কোথাও বাঁধ! নাহি তার। 

খাঁচার পাখী বলে খাঁচাটি পরিপাটী 
কেমন ঢাঁকা চারিধার। 

বনের পাথী বলে আপন ছাড়ি দাও 
মেঘের মাঝে একেবারে । 

খাঁচার পাখী বলে নিরালা স্থখকোণে 
বাঁধিয়া রাখ আপনারে । 

বনের পাখী বলে-__না, 

সেথা কোথায় উড়িবারে পাই! 
খাঁচার পাখী বলে--হায় 

মেঘে কোথায় বসিবার ঠাই ! 


এমনি ছুই পাখী দৌহারে ভালবাসে 
তবুও কাছে নাহি পায়। 

খাচার ফাঁকে ফাঁকে পরশে মুখে মুখে 
নীরবে চোখে চোখে চায়। 

ছজনে কেহ কারে বুঝিতে নাহি পারে 
বুঝাতে নারে আপনায়। 


৫৪ সোনার তরী । 


দুজনে একা একা! ঝাঁপটি মরে পাখা 
কাতরে কহে কাছে আয়। 
বনের পাখী বলে-__না 
কবে খাঁচায় রধি দিবে দ্বার । 
খাঁচার পাখী বলে- হাঁক 
মোর শকতি নাহি উড়িবার ! 


১৯ আষাঢ়, ১২৯৪ 


আঁকাঁশের চাদ । 


হাতে তুলে দাঁও আকাশের চাদ-- 
এই হল তার বুলি। 
দিবস রজনী বেতেছে বহিয়া, 
কাদে সে ছু'হাত তুলি”। 
হাসিছে আকাশ, বহিছে বাতাস, 
পাখীর গাহিছে সুখে । 
সকখলে রাখাল চলিয়াছে মাঠে, 
বিকালে ঘরের মুখে । 
বালক বালিক ভাই বোনে মিলে 
খেলিছে আঙ্গিনা কোণে, 
কোলের শিশুরে হেবিয়া জননী 
« হাঁসিছে আপন মনে। 
কেহ হটে যাক কেহ বাটে যায় 
চলেছে যে যার কাজে, 
কত জনরব কত কলরব 
উঠিছে আকাশ মাঝে। 
পথিকেরা এসে তাহারে শুধায় 
“কে তুমি কাঁদিছ বসি ?” 
সে কেবল বলে নয়নের জলে 
-হাঁতে পাই নাই শশি! 


৫৬ 


সোনার তরী । 


সকালে বিকালে ঝরি পড়ে কোলে 
অযাচিত ফুলদল, 

দখিণ সমীর বুলায় ললাটে 
দক্ষিণ করতল। 

প্রভাতের আলো আশীষ-পরশ 
করিছে তাহার দেহে, 

রজনী তাহারে বুকের আঁচলে 
ঢাকিছে নীরব ন্নেহে। 

কাছে আসি শিশু মাগিছে আদর 
ক জড়ায়ে ধরি+, 

পাশে আসি যুবা চাহিছে তাহারে 
লইতে বন্ধু করি”। 

এই পথে গৃহে কত আনাগোনা, 
কত ভালবাসাবাসি, 

সংসারম্থথ কাছে কাছে তার 
কত আসে যায় ভাসি”, « 

মুখ ফিরাইয়া সে রহে বগিস্বা, 
কহে সে নয়নজলে,-- 

তোমাদের আমি চাহি না কারেও, 
শশি চাই করতলে। 


শশি যেথা ছিল সেথাই রহিল, 
সেও বসে” এক ঠীঁই। 


আকাশের চাদ । ৫৭ 


অবশেষে যবে জীবনের দিন 
আর বেশি বাকি নাই, 

এমন সময়ে সহ! কি ভাবি 
চাহিল সে মুখ ফিরে”, 

দেখিল ধরণী শ্যামল মধুর 
স্থনীল সিন্কৃতীরে | 

সোনার ক্ষেত্রে রুষাঁণ বসিয়া 
কাঁটিতেছে পাকা ধান, 

ছোট ছোট তরী পাল তুলে, যায় 
মাঝি বসে? গায় গান । 

দুরে মন্দিরে বাঁজিছে কীসর, 
বধূরা চলেছে ঘাটে, 

মেঠো পথ দিয়ে গৃহস্থ জন 
আসিছে গ্রামের হাটে। 

নিশ্বাস ফেলি” রহে আঁখি মেলি 
কহে অিয়মাণ মন, 

শশি নাহি চাই, যদি ফিরে পাই 
আরবার এ জীবন! 


দেখিল চাহিয়া জীবনপূর্ণ 
স্থন্বর লোকালয় 

প্রতিদিবসের হবষে বিষাদে 
চির-কল্লোলময়। 


সোনার তরী । 


শ্নেহন্ুধা লয়ে গৃহের লক্ষী 
ফিরিছে গৃহের মাঝে, 

প্রতি দ্রিবসেরে করিছে মধুর 
প্রতিদিবসের কাজে । 

সকাল, বিকাল, ছুটি ভাই আসে 
ঘরের ছেলের মত, 

রজনী সবারে কোঁলেতে লইছে 
নয়ন করিয়! নত। 

ছোট ছোট ফুল, ছোট ছেটি হাঁসি, 
ছোট কথা, ছোট সুখ, 

প্রতি নিমেষের ভালবাসাগুলি, 
ছোট ছোট হাসিমুখ 

আঁপনা-আপনি উঠিছে কুটিয়। 
মানবজীবন ধিরি+, 

বিজন শিখরে বসিয়া সে তাই 
দেখিতেছে ফিরি ফিরি” 


দেখে বহুদূরে ছায়াপুরীসম 
অতীত জীবন-রেখ!, 

অস্তরবির সোনার কিরণে 
নৃতন বরণে লেখা । 

যাহাদের পানে নয়ন তুলিয়া 
চাহে নি কখনো ফিরে, 


আকাশের চাদ। ৫৯ 


নবীন আভায় দেখা দেয় তাঁরা 
স্বতিসাগরের তীরে । 
হতাশ হৃদয়ে কীদিয়া কাদিয়া 
পূরবী রাগিণী বাজে, 
দব'বাহু বাড়াঁয়ে ফিরে যেতে চায় 
ওই জীবনের মাঝে । 
দিনের আলোক মিলায়ে আদিল 
তবু পিছে চেয়ে রহে 7 
বাহা পেয়েছিল তাই পেতে চায় 
তার বেশি কিছু নহে। 
সোনার জীবন রহিল গড়িয়া! 
কোথা সে চলিল ভেসে! 
শশির লাগিরা কাদিতে গেল কি 
রবিশশিহীন দেশে! 


২২ আষাঢ়, ১২৭৯৯। 


গানভজ | 


গাহিছে কাঁশিনাথ নবীন যুবা 
ধ্বনিতে সভাগৃহ 'ঢাঁকি”, 
কণ্ঠে খেলিতেছে সাতটি স্তুর 
সাতটি যেন পোষা পাখী । 
শাণিত তরবারি গলাটি যেন 
নাচিয়া ফিরে দশদিকে, 
কখন্‌ কোথা যায় না পাই দিশা, 
বিজুলি-হেন ঝিকিমিকে। 
আপনি গড়ি” তোলে বিপদজাঁল 
আপনি কাটি” দেয় তাহা। 
সভার লোকে শুনে অবাক মানে 
সঘনে বলে বাঁহা বাহ! 


কেবল বুড়া রা: প্রতাপ বায় 
কাঠের মত বসি আছে। 
বরজলাল ছাড়া কাহারো গান 
ভাল ন। লাগে তার কাছে। 
বাঁলকবেলা হতে তাহারি গীতে 
দিল সে এতকাল যাঁপি+, 
বাদল দিনে কত মেঘের গান, 
হোলির দিনে কত কাফি! 


গান্ভ ঙ। ৬১ 


গেয়েছে আগমনী শরতপ্রাতে, 
গেয়েছে বিজয়ার গান, 
হৃদয় উছসিয়৷ অশ্রজলে 
ভাঁমিয়া গেছে ছুনয়ান। 
যখন মিলিয়াছে বন্ধুজনে 
সভার গৃহ গেছে পুরে, 
গেয়েছে গোকুলের গোয়াল-গাঁথ৷ 
ভূপালী মূলতানী স্থরে। 
ঘরেতে বারবার এসেছে কত 
বিবাহ-উৎ্সব রাঁতি, 
পরেছে দাসদাসী লোহিত বাস 
জ্বলেছে শত শত বাতি, 
বসেছে নব বর সলাঁজ মুখে 
পরিয়া মণিআভরণ, 
করিছে পরিহাস কানের কাছে 
সমবয়সী প্রিয়জন, 
সামনে বমি তার বরজলাল 
ধরেছে সাহানার সুর ১-- 
সেসব দিন আর সে সব গান 
হৃদয়ে আছে পরিপূর। 
সে ছাড়া কারে! গান শুনিলে তাই 
মর্মে গিয়ে নাহি লাগে, 
অতীত প্রাণ যেন মন্ত্রবলে 
নিমেষে প্রাণে নাহি জাগে। 


৬২ 


সোনার তরী | 


প্রতাপ রায় তাই দেখিছে শুধু 
কাশির বৃথা মাথানাড়া, 

স্থরের পরে স্থুর ফিরিয়া যায় 
হৃদয়ে নাহি পায় সাড়!। 


থামিল গান যবে, ক্ষণেক তরে 
বিরাম মাগে কাশিনাথ। 
বরজলাল পানে প্রতাপ রায় 
হাসিয়া করে আখিপাত। 
কানের কাছে তার রাখিয়া মুখ, 
কহিল, “ওস্তাদ জি, 
গানের মত গান শুনায়ে দাও, 
এরে কি গান বলে, ছি! 
এ যেন পাখী লয়ে বিবিধ ছলে 
শিকারী বিড়ালের খেলা! 
সেকালে গাঁন ছিল একালে হায় 
গানের বড় অবহেজ 15 


বরজলাল বুড়া শুরুকেশ 
শুভ্র উষ্ভীষ শিরে, 

বিনতি করি” সবে, সভার মাঝে 
আসন নিল ধীরে ধীরে। 

শিরা-বাহির-করা শীর্ণ করে 
তুলিয়া! নিল তানপুর, 


গাঁনভঙ্গ | ৬৩ 


ধরিল নতশিরে নয়ন মুদি 
ইমনকল্যাণ সুর | 
কাপিয়! ক্ষীণ স্বর মরিয়। যায় 
বৃহৎ সভাগৃহকোণে, 
ক্ষুদ্র পাখী যথা! ঝড়ের মাঝে 
উড়িতে নারে প্রাণপণে । 
বসিয়া বামপাশে প্রতাপ রায় 
দিতেছে শত উৎ্সাহ-_ 
“আহাহা, বাঁহা বাহ! !”--কহিছে কানে 
“গল! ছাড়িয়া! গান গাহ ।” 


সভার লোকে সবে অগন্মনা, 

কেহ বা কানাকাঁনি করে । 
কেহ বা তোলে হাই, কেহ বা ঢোলে, 

কেহ বাঁ চলে” যায় ঘরে । 
“ওরে রে আয় লয়ে তামাকু পান” 

ভৃত্যে ডাকি কেহ কয়। 
সঘনে পাখা নাড়ি কেহ বা! বলে 

“গরম আজি অতিশয় !” 
করিছে আনাগোন। ব্যস্ত লোক, 

ক্ষণেক নাহি রহে চুপ) 
নীরব ছিল সভা, ক্রমশ সেখ! 

শব্দ উঠে শতরূপ। 


৬৪ 


সোনার তরী । 


বুড়ার গান তাহে ডুবিয়! যায়, 
তুফান মাঝে ক্ষীণ তরি ; 
কেবল দেখা যায় তানপুরায় 
আঙ্গুল কাপে থরথরি। 
হাদয়ে যেথা হ'তে গানের সুর 
উছপি উঠে নিজ সুখে 
হেলার কলরব শিলার মত 
চাপে সে উৎসের মুখে । 
কোথায় গান আর কোথায় প্রাণ, 
ছ'দিকে ধায় দুইজনে, 
তবুও রাখিবারে প্রভুর মান 
বরজ গায় প্রাণপণে। 


গানের এক পদ মনের শ্রমে 
হাঁরায়ে গেল কি করিয়া ! 

আবার তাড়াতাড়ি ফিরিয়া গাহে 
লইতে চাহে গুধরিয়!। 

আবার ভুলে? যায়, পড়ে না মনে, 
সরমে মস্তক নাড়ি 

আবার স্থুরু হতে ধরিল গান 
আবার ভুলি দিল ছাড়ি”। 


দ্বিগুণ থরথরি কীপিছে হাঁত, 


স্মরণ করে গুরুদেবে। 


গানভঙ্গ ] ৬৫ 


ক কাপিতেছে কাতরে, যেন 
বাতাসে দীপ নেবে-নেবে ! 
গানের পদ তবে ছাড়িয়া দিয়! 
রাখিল সুরটুকু ধরি+, 
সহসা হাহা রবে উঠিল কীদি 
গাহিতে গিয়ে হাহ! করি"! 
কোথায় দুরে গেল স্তরের খেলা, 
কোথায় তাল গেল ভাসি”, 
গানের সুতা ছিড়ি” পড়িল খসি? 
অশ্রু-মুকুতাঁর রাশি । 
কোলের সখী তানপুরার পরে 
রাখিল লজ্জিত মাথা, 
ভূলিল শেখা গান, পড়িল মনে 
বাল্য ক্রন্দন-গাথা। 
নয়ন ছলছল প্রতাপ রায় 
কর বুলায় তার দেহে। 
“আইস, হেথা হ'তে আমরা যাই,” 
কহিল সকরুণ স্নেহে। 
শতেক দীপজালা” নয়ন-ভর! 
ছাঁড়ি সে উৎসব-ঘর 
বাহিরে গেল ছুটি প্রাটীন নথ! 
ধরিয়া ছুছু দৌহা কর। 


৬৬ 


সোনার তরী । 


বরজ করযোড়ে কহিল, প্রতুঃ 
মোঁদের সভা! হ'ল ভঙ্গ । 
এখন আপিয়াছে নৃতন লোক 
ধরায় নব নব রঙ্। 
জগতে আমাদের বিজন সভা 
কেবল তুমি আর আমি। 
সেথায় আনিয়োন! নৃতন শ্রোতা, 
মিনতি তব পদে স্বামি! 
একাকী গায়কের নহে ত গান, 
মিলিতে হবে দুইজনে ! 
গাহিবে এক জন খুলিয়া গলা, 
আরেক জন গাবে মনে! 
তটের বুকে লাগে জলের ঢেউ 
তবে সে কলতান উঠে, 
বাতাসে বন-সভা শিহবি” কাঁপে 
তবে সে মন্্র ফুটে 
জগতে যেথা যত রয়ে”: ধ্বনি 
যুগল মিলিয়াছে আগে। 
যেখানে প্রেম নাই বোবার সভা, 
সেখানে গান নাহি জাগে। 


২৪ আধা, ১৩০০ । 


যেতে নাহি দিব। 


দুয়ারে প্রস্তত গাড়ি; বেল! দ্বিগ্রহর ; 
হ্মস্তের রৌদ্র ক্রমে হতেন্টু প্রথর ) 
জনশূন্য পল্লিপথে ধুলি উড়ে বীয় 

মধ্যাহ্ন বাতাসে; স্নিগ্ধ অশথের ছায় 

ক্লান্ত বৃদ্ধা ভিথারিণী জীর্ণ বস্ত্র পাতি” 
ঘুমায়ে পড়েছে; যেন রৌদ্রমরী রাতি 

ঝা ঝা করে চারিদিকে নিস্তব্ধ নিঃঝুম ;--- 
শুধু মোর ঘরে নাহি বিশ্রামের ঘুম। 


গিয়েছে আিন,--পূজার ছুটির শেষে 
ফিরে যেতে হবে আজি বহু দূর দেশে 
নেই কর্মস্থানে। ভৃত্যগণ ব্যস্ত হয়ে 
বাঁধিছে জিনিষপত্র দড়াদড়ি লয়ে, 
ইাঁকাহাকি ডাকাডাকি এঘরে ওঘরে। 
ঘরের গৃহিণী, চক্ষু ছলছল করে, 
ব্যথিছে বক্ষের কাছে পাষাণের ভার, 
তবুও সময় তার নাহি কাদিবার 
একদণ্ড তরে? বিদায়ের আয়োজনে 
ব্যস্ত হয়ে ফিরে; যথেষ্ট না হয় মনে 
যত বাড়ে বোঝা । আমি বলি, “এ কি কা! 
এত ঘট এত পট হাড়ি সরা ভা 


৬৮ সোনার তরী । 


বোতল বিছানা বাক্স রাজ্যের বোঝাই 
কি করিব লয়ে! কিছু এর রেখে ধাই 
কিছু লই সাথে !” 


সে কথায় কর্ণপাত 

নাহি করে কোন জন। “কি জানি দৈবাঁৎ 
এটা ওটা আবশ্যক যদি হয় শেষে 

তখন কোথায় পাবে বিভু'ই বিদেশে !-- 
সোনা-মুগ সরুচাল সুপারি ও পান 

ও হাঁড়িতে ঢাক? আছে ছুই চারি খান 
গুড়ের পাটালি; কিছু ঝুনা নারিকেল ; 
ছুই ভাগ ভাল রাই-শরিষার তেল; 
আমসত্ব আমচুর) সের ছুই দুধ) 

এই সব শিশি কৌটা ওবুধ বিষুধ। 

মিষ্টান্ন রহিল কিছু হাঁড়ির ভিতরে, 

মাথ। খাও, ভুলিয়োনা, খেয়ে! নে করে ।” 
বুঝিন্ুু যুক্তির কথা বৃথা! বা.ধ্যয়। 
বোঝাই হইল উ“চু পর্বতের ন্যায় । 
তাকান ঘড়ির পানে, তার পরে ফিরে 
চাহিনু প্রিয়ার মুখে ; কহিলাম ধীরে 
“তবে আমি” অমনি ফিরায়ে মুখখানি 
তশিরে চক্ষুপরে বস্ত্রাঞ্চল টানি 

অমঙ্গল অশ্রজল করিল গোপন । 


যেতে নাহি দিব। ৬০ 


বাহিরে দ্বারের কাছে বমি অন্যমন 

কন্তা মৌর চারি বছরের ; এতক্ষণ 

অন্য দিনে হয়ে যেত স্নান সমাপন, 

ছুটি অন্ন মুখে না তুলিতে আঁখিপাতা 
সুদিয়া আসিত ঘুমে; আজি তাঁর মাতা 
দেখে নাই তারে; এত বেলা হয়ে যায় 
নাই স্নানাহার। এতক্ষণ ছায়াপ্রায় 
ফিরিতেছিল দে মোর কাছে কাছে থেঁসে, 
চাহিয়া দেখিতেছিল মৌন নিণিমেষে 
বিদায়ের আয়োজন । শ্রীস্ত দেহে এবে 
বাহিরের দ্বারপ্রান্তে কি জানি কি ভেবে 
চুপিচাপি বসেছিল। কহিন্থ যখন 

“মাগো, আসি” সে কহিল বিষণ নয়ন 
ম্নান মুখে “যেতে আঁমি দিব না তোমায়! 
যেখানে আছিল বসে রহিল সেথায়, 
ধরিল না বাহু মোর, রুধিল না দ্বার, 

শুধু নিজ হৃদয়ের ন্নেহ-অধিকাঁর 
প্রচারিল--“যেতে আমি দিব না তোমায় !” 
তবুও সময় হল শেষ, তবু হায় 

যেতে দিতে হল! $/ 


ওরে মোর মূঢ় মেয়ে ! 
কে রে তুই, কোথা হতে কি শকতি পেয়ে 


৩ 


সোনার তরী। 


কহিলি এমন কথ, এত স্পর্দঘাভরে-_ 
“যেতে আমি দিব না! তোমায় !” চরাচরে 
কাহারে রাঁখিরি ধরে” ছুটি ছোট হাতে, 
গরবিনি, সংগ্রাম করিবি কার সাথে 

বসি গৃহদ্বারপ্রান্তে শ্রান্ত ক্ষুদ্র দেহ 

শুধু লয়ে ওইটুকু বুকভর! স্নেহ! 

ব্যথিত হৃদয় হতে বহুতয়ে লাজে 

মর্ম্ের প্রার্থন! শুধু ব্যক্ত করা সাজে 

এ জগতে,শুধু বলে রাঁথা “যেতে দিতে 
ইচ্ছা নাহি!” হেন কথা কে পারে বলিতে 
“যেতে নাহি দিব !” শুনি তোর শিশুমুথে 
ন্সেহের প্রবল গর্ববাণী, সকৌতুকে 

হাসিয়া সংসার টেনে নিয়ে গেল মোরে, 
তুই শুধু পরাভূত চোঁথে জল তোরে 
ছুয়ারে রহিলি বসে ছবির মতন, 

আমি দেখে চলে” এনু মুছিয়া নয়ন। 


চলিতে চলিতে পথে হেরি ছুইখারে 
শরতের শস্তক্ষেত্র নত শম্তভারে 
রৌদ্র পোহাইছে। তরুশ্রেণী উদাসীন 
রাজপথপাশে, চেয়ে আছে সারাদিন 
আপন ছায়ার পানে । বহে খরবেগ 


শরতের ভরা গঙ্গা । শুভ্র খগ্ডমেঘ 


যেতে নাহি দিব। ৭১. 


মাতৃহ্প্পরিতৃপ্ত সুখনিদ্রারত 
সগ্যোজাত সুকুমার গোবৎসের মত 
নীলান্বরে শুয়ে ।_ দীপ্ত রৌদ্রে অনাবৃত 
যুগযুগাস্তরক্লাস্ত দিগস্তবিস্তৃত | 
ধরণীর পানে চেয়ে ফেলিনু নিশ্বাস । 


কি গভীর হছঃখে মগ্ধ সমস্ত আকাশ, 
সমস্ত পৃথিবী ! চলিতেছি যতদূর 
শুনিতেছি একমাত্র মর্মান্তিক স্তুর ূ 
“যেতে আমি দিব না তোমায় !” ধরণীর 
প্রাস্ত হতে নীলাভ্রের সর্ধপ্রান্ততীর 
ধ্বনিতেছে চিরকাল অনাগ্স্ত রবে 
“যেতে নাহি দিব ! যেতে নাহি দিব!” সবে 
কহে “যেতে নাহি দিব!” তৃণ ক্ষুদ্র অতি 
তারেও বাঁধিয়া বক্ষে মাতা বসুমতী 

/ কহিছেন প্রাণপণে “যেতে নাহি দিব !” 
আয়ুঃক্ষীণ দীপমুখে শিখা নিবনিব” .. ... 
'্সাধারের গ্রাস হতে কে টানিছে তারে, , 
কহিতেছে শতবার “যেতে দিব না! রে!” 
এ অনন্ত চরাচরে স্বর্থমর্ত্য ছেয়ে 
সব চেয়ে পুরাতন কথা, সব চেয়ে 
গভীর ক্রন্দন “যেতে নাহি দিব 1” হায়, 
তবু ষেতে দ্িতে হয়, তবু চলে যায়! 
চলিতেছে এমনি অনার্দিকাঁল হতে। 





প্রল-মুত্রবাহী স্যজরনের শোতে 
প্রসারিত বাওবাহ অলত্ত আঁখিতে 
77 /নদা যেতে” ডাকিতে ডাকিতে 
হু করে" তীব্রবেগে চলে যাঁয় সবে 
পুর্ণ করি বিশ্বতট আর্ত কলরবে। 
সম্মুখ উত্খিরে ডাকে পশ্চাতের ঢেউ 
“দিবনা দিবনা যেতে”_ নাহি শুনে কেউ, 
নাহি কোন সাড়া! 


চারিদিক হতে আজি 
অবিশ্রাম কর্ণে মোর উঠিতেছে বাজি 
সেই বিশ্ব-মন্শ্ভেদী করুণ ক্রন্দন 
মোর কন্তাকগস্বরে । শিশুর মতন 
বিশ্বের অবোধ বাণী। চিরকাল ধরে, 
যাহ! পায় তাই সে হারায়, তবু ত ৫র 
শিথিল হল না মুষ্টি, তবু অদ্িরিত 
সেই চারি বৎসরের কন্তাটি- মত 
অক্ষুণ্ন প্রেমের গর্ধে কহিছে সে ডাকি 
“যেতে নাহি দিব” : শ্ানমুখ, অশ্রু আখি, 
দে দণ্ডে পলে পলে টুটিছে গরব 
তবু প্রেম কিছুতে না মানে পরাভব,-__ 
তবু বিদ্রোহের ভাবে রুদ্ধ কে কয় 
“যেতে নাহি দিব” যতবার পরাজয় 


যেতে নাহি দিব। ৭৩ 


ততবার কহে--“আমি ভালবাসি যারে 
সেকি কতু আমা হতে দূরে যেতে পারে ! 
আমার আকাক্ষাণম এমন আকুল, 
এমন সকল-বাঁড়া, এমন অকুল, 
এমন প্রবল, বিশ্বে কিছু আছে আর!» 
- এত বলি দর্পভরে করে সে প্রচার +; 
“যেতে নাহি দিব !”-তথনি দেখিতে পাক 
শুষ্ক তুচ্ছ ধুলিসম উড়ে” চলে” যায় 
একটি নিশ্বাসে তার আদরের ধন, 
.-অশ্রজলে ভেসে যায় ছুইটি নয়ন, 
ছিন্নমূল তরুসম পড়ে পৃথ্ীতলে 
হতগর্ব নতশির।--তবু প্রেম বলে 
“সত্য ভঙ্গ হবে না বিধির । আমি তাঁর 
পেয়েছি স্বাক্ষর-দেওয়৷ মহা! অঙ্গীকার 
চির-অধিকাঁর লিপি 1” তাই স্ফীতবুকে 
সর্বশক্তি মরণের মুখের সম্মুখে 
দাঁড়াইয়া সুকুমার ক্ষীণ তন্থলতা 
বলে “মৃত্যু তুমি নাই ।”__হেন গর্বকথা ! 
মৃত্যু হাসে বসি! মরণ-পীড়িত সেই 
চিরঞ্জীবী প্রেম আছন্ন করেছে এই 
অনস্ত সংসার, বিষণ্ন নয়ন পরে 
অশ্রবাম্পসম, ব্যাকুল আশঙ্কাভরে 
চির-কম্পমান। আশাহীন শ্রাস্ত আশা 
টানিয়া রেখেছে এক বিষাদ-কুয়াশ। 

৭ 


৭8 


সোনার তরী । 


বিশ্বময় । আজি যেন, পড়িছে নয়নে 
ছ'থানি অবোঁধ বাহু বিফল বাঁধনে 
জড়ায়ে পড়িয়া আছে নিথিলেরে 'ঘিরে, 
স্তব্ধ সকাতর। চঞ্চল আোতের নীরে 
পড়ে” আছে একখানি অচঞ্চল ছায়া, 
অশ্রবৃষ্টিভরা কোন্‌ মেঘের সে মায়! ! 


তাই আজি শুনিতেছি তরুর মর্্দরে 
এত ব্যাকুলতা ; অলস ওদাস্তভরে 
মধ্যাহের তণ্তবায়ু মিছে খেলা করে 
শুফ পত্র লয়ে; বেল! ধীরে যাঁয় চলে, 
ছায়া দীর্ঘতর করি” অশখের তলে । 
মেঠো স্থরে কাদে যেন অনন্তের বাঁশি 
বিশ্বের প্রাস্তর মাঝে ; শুনিয়া উদাঁসী 
বসুন্ধরা বসিয়। আছেন এলোচুলে 
দুরব্যাপী শস্তক্ষেত্রে জাহ্ৃবীর কুলে 
একখানি রৌদ্রপীত হিরণ্য-অঞ্চল 


'বক্ষে টানি দিয়; স্থির নয়নণল 


দূর নীলাম্বরে মগ্ন ; মুখে নাহি বাণী। 
দেখিলাম তার সেই গ্রান মুখখানি 
সেই দ্বারপ্রান্তে লীন, স্তব্ধ মর্মাহত 
মোর চারি বৎসরের কন্তাঁটির মত। 
১৪ কান্তিক, ১২৯৯ 


সমুদ্রের প্রতি । 
( পুরীতে সমুদ্র দেখিয়া ।) 


হে আদিজননি, সিন্ধু, বসুন্ধরা সন্তান তোমার,' 
একমাত্র কন্তা তব কোঁলে। তাই তন্দ্রা নাহি আর 
চক্ষে তব, তাই বক্ষ জুড়ি” সদা শঙ্কা, সদা আশা, 
সদা আন্দোলন ; তাই উঠে বেদমন্ত্রসম ভাষা 

নিরস্তর প্রশান্ত অন্বরে, মহেন্দ্রন্দিরপানে টা 
অন্তরের অনন্ত প্রার্থনা, নিয়ত মঙ্গল গানে 

ধ্বনিত করিয়া দিশি দ্িশি; তাই ঘুমন্ত পৃথথীরে 
অসংখ্য চুষ্ধন কর আলিঙ্গনে সর্ব অঙ্গ ঘিরে, 
ভরঙ্ষবন্ধনে বাঁধি, নীলাম্বর অঞ্চলে তোমার 

সযতে বেষ্টিয়া ধরি” সন্তর্পণে দেহখানি তার 
স্বকোমল সুকৌশলে । এ কি স্ুগন্তীর স্নেহখেল। 
অন্থুনিধি, ছল করি" দেখাইয়া মিথ্যা অবহেলা 

বীরি ধীরি পা টিপিয়া পিছু হুটি” চলি” যাঁও দুরে, 
যেন ছেড়ে যেতে চাঁও-_-আবাঁর আনন্দপুর্ণ সুরে 
উল্লসি” ফিরিয়া আসি, কল্লোলে ঝাঁপায়ে পড় বুকে 
রাশি রাশি শুভ্রহাস্তে, অশ্রজলে, স্নেহগর্বস্থথে 
আর্্,করি+ দিয়ে যাঁও ধরিত্রীর নির্মল ললাট 
আশীর্বাদে । নিত্য বিগলিত তব অন্তর বিরাট, 
আদি অন্ত শ্নেহরাশি,--আঁদি অস্ত তাহার কোথারে, 
কোথা তার তল, কোথা কুল ! বল কে বুঝিতে পারে 


৭৬ সোনার তরী । 


তাহার অগাধ শাস্তি, তাহার অপার ব্যাকুলতা, 
তার স্তগস্ভীর মৌন তার সমুচ্ছল কলকথা, 

তার হাস্ত, তার অশ্ররাশি 1 কখনো বা আপনারে 
রাখিতে পার না যেন, স্নেহপুর্ণ স্ফীত স্তনভারে 
উন্মাদিনী ছুটে” এসে ধরণীরে বক্ষে ধর চাপি' 
নির্দয় আবেগে; ধর। প্রচণ্ড পীড়নে উঠে কাঁপি” 
রুদ্ধশ্বাসে উদ্দশ্বাসে চীৎকারি উঠিতে চাহে কাদি” 
উন্মত্ত স্নেহক্ষুধায় রাক্ষপীর মত তারে বাঁধি” 
পীড়িয়া নাড়িয়া যেন টুটিয়৷ ফেলিয়া একেবারে 
অসীম অতৃপ্তি মাঝে গ্রাসিতে নাশিতে চাহ তারে 
প্রকাঁও প্রলয়ে। পরক্ষণে মহা অপরাধীপ্রায় 

পড়ে” থাক তটতলে স্তব হয়ে বিষণ্ন ব্যথায় 

নিষন নিশ্চল ;-_ধীরে ধীরে প্রভাত উঠিয়৷ এসে 
শাস্তদৃষ্টি চাহে তোমাপানে ; সন্ধ্যাসখী ভালবেসে 
শ্নেহকরম্পর্শ দিয়ে সান্তনা করিয়ে চুপে চুপে 

চলে" যায় তিমির-মন্দিরে ; রাত্রি শোনে বন্ধুরূপে 
গুমরি” ক্রন্দন তব রুদ্ধ অন্কতাপে ফুলে” ফুলে 


আমি পৃথিবীর শিশু বসে? আছি তব উপকূলে, 
শুনিতেছি ধ্বনি তব; ভাবিতেছি, বুঝা যায় যেন 
কিছু কিছু মর্শ তার_-বোবার ইঙ্গিত-ভাষা হেন 
আত্মীয়ের কাছে । মনে হয়, অন্তরের মাঝথানে 
নাড়ীতে যে রক্ত বহে সেও যেন ওই ভাষা জানে 


সমুদ্রের প্রতি । ৭৭ 


আর কিছু শেখে নাই। মনে হয়, যেন মনে পড়ে 
যখন বিলীন ভাবে ছি ওই বিরাট জঠরে 
অজাত ভূবন-ভ্রণমাঝে, লক্ষকোটি বর্ষ ধরে, 

ওই তব অবিশ্রাম কলতান অন্তরে অন্তরে 

মুত্রিত হইয়া গেছে; সেই জন্ম-পুর্কের স্মরণ, 
গর্ভস্থ পৃথিবীপরে সেই নিত্য জীবনস্পন্দন 

তব মাতৃহৃদয়ের--অতি ক্ষীণ আভাসের মত 
জাগে যেন সমস্ত শিরায়, শুনি যবে নেত্র করি” নত 
বসি জনশূন্য তীরে ওই পুরাতন কলধ্বনি। 

দিক্‌ হতে দিগন্তরে যুগ হতে যুগান্তর গণি” 

তখন আছিলে তুমি একাকিনী অখও অকুল 
আত্মহারা ; প্রথম গর্ভের মহা রহস্ত বিপুল 

না বুঝিয়া! দিবারাত্রি গুড় এক ন্নেহব্যাকুলতা, 
গর্ভিণীর পূর্বরাঁগ, অলক্ষিতে অপুর্ব্ব মমতা, 
অজ্ঞাত আকাক্ষারাশি, নিঃসন্তান শৃন্ত বক্ষোদেশে 
নিরন্তর উঠিত ব্যাকুলি। প্রতি প্রাতে উষা এসে 
অনুমান করি” যেত মহাসস্তানের জন্মদিন, 

নক্ষত্র রহিত চাহি” নিশি নিশি নিমেষবিহীন 
শিশুহীন.শয়ন-শিয়রে। দেই আদি জননীর 
ঈনশৃন্য জীবশৃন্ত শ্নেহচঞ্চলতা৷ সুগভীর, 

আসন্ন প্রতীক্ষাপূর্ণ সেই তব জাগ্রত বাসনা, 
অগাধ প্রাণের তলে দেই তব অজান। বেদন! 
অনাগত মহা! ভবিষ্যৎ কাঁগি, হৃদয়ে আমার 
ধগাস্তর-স্থতিসম উদয় হতেছে বারম্বার। 


৫ রূতরী |... 


[2 
আমারো চিত্তের মাঝে তেমনি অজ্ঞাত ব্যথাভরে, 
তেমনি অচেন! প্রত্যাশায়, অলক্ষ্য সদূর তরে 
উঠিছে মর্খবর স্বর ।[মানব-হৃদয়-সিদ্ধুতলে 
আপনি সে নাহি জানে । শুধু অর্ধ অন্ুতব তারি” 
ব্যাকুল করেছে তারে, মনে তার দিয়েছে সঞ্চীরি” 
আকারপ্রকারহীন তৃপ্তিহীন এক মহ! আশা 
প্রমাণের অগোচর, প্রত্যক্ষের বাহিরেতে বাসা 
তর্ক তাঁরে পরিহাসে, মন্্ম তারে সত্য বলি” জানে, 
সহত্স ব্যাঘাত মাঝে তবুও সে সন্দেহ না মানে, 
প্জেননী যেমন জানে জঠরের গোপন শিশুরে, 
প্রাণে যবে স্নেহ জাগে, স্তনে যবে ছুদ্ধ উঠে পুরে? । 
প্রাণভরা ভাষাহরা দিশাহারা সেই আশ নিয়ে 
চেয়ে আছি তোম! পানে ? তুমি সিন্ধু প্রকাণ্ড হাসিয়ে 
টানিয়া নিতেছ যেন মহাবেগে কি নাড়ীর টানে 
আমার এ মর্খানি তোমার তরক্মমাবখানে 
কোলের শিশুর মত! 


হে জলধি, বুঝিবে কি তুমি 
আমার মানব ভাঁষা? জান কি তোমার ধরাভূমি 
পীড়ায় পীড়িত আজি ফিরিতেছে এপাশ ওপাশ, 
চক্ষে বহে অশ্রধারা, ঘন ঘন বহে উষ্কশ্বাস, 
নাহি জানে কি যে চায়, নাহি জানে কিসে ঘুচে তৃষ 
আপনার মনোমাঝে আপনি সে হারায়েছে দিশা! 


সমুদ্রের প্রতি । ৭৯ 


বিকারের মরীচিকাঁঁজালে। অতল গম্ভীর তব 

অন্তর হইতে কহ সাত্বনার বাক্য অভিনব 

আষাঢ়ের জলদমন্ত্রের মতি সবি মাতৃগাণি 

চিন্তাতপ্ত ভালে তার তাঁলে তালে বারবার হানি, 
সর্বাঙ্সে সহঅবার দিয়! তারে শ্নেহময্ব চুমা, 

বল তারে "শান্তি ! শান্তি!” বল তারে, “ঘুমা, ঘৃমা, ঘুম !” 


১৭ চৈত্র, ১২৯৯। 


প্রতীক্ষা । 


ওরে মৃত্যু, জানি তুই আমার বক্ষের মাঝে 
বেঁধেছিদ্‌ বাসা, 

যেখানে নির্জন কুগ্জে ফুটে আছে যত মোর 
€ম্নহ ভালবাসা, 

গেপন মনের আশা, জীবনের ছুঃখ স্ব, 
মন্ম্রে বেদনা, 

চির দিবসের যত হাসি-অশ্র-চিহ আকা 
বাসন! সাধনা; 

যেখানে নন্দন ছায়ে নিঃশঙ্কে করিছে খেলা 
অন্তরের ধন, 

স্নেহের পুত্তলিগুলি, আজন্মের স্নেহস্থৃতি, 
আনন্দ-কিরণ; 

কত আলো, কত ছাঁয়, কত ক্ষুদ্র বিহঙ্গের 
গীতিময়ী ভাষা, 

ওরে মৃত্যু, জানিয়াছি, তারি 4(ৰখাঁনে এসে 
বেঁধেছিস্‌ বসা! 


নিশিদিন নিরস্তর জগৎ জুড়িয়া খেলা 
জীবন চঞ্চল ! 

চেয়ে দেখি রাজপথে চলেছে অশ্রাস্ত গতি 

যত পাস্থ দলও; 

বৌত্রপাু নীলাম্বরে পাখীগুলি উড়ে যাক 


প্রাণপর্ণ (বেগে. 


প্রতীক্ষা । ৮১ 


সমীরকম্পিত বনে নিশিশেষে নব নব 
পুষ্প উঠে জেগে; 

চারি দিকে কত শত দেখাশোনা আনাগোনা 

- প্রভাতে সন্ধ্যায়; 

দিনগুলি প্রতি প্রাতে খুলিতেছে জীবনের 
নৃতন অধ্যায়? 

তুমি শুধু এক প্রান্তে বসে আছ অহনিশি 
স্তব্ধ নেত্র খুলি”__ 

মাঝে মাঝে রাত্রিবেলা উঠ পক্ষ ঝাপটিয়া 
বক্ষ উঠে ছুলি” ! 


ষে স্থদুর সমুদ্রের পরপার রাজ্য হতে 
আপিয়াছি হেথা, 

এনেছ কি সেথাকার নূতন সংবাদ কিছু 
গোপন বারতা ! 

সেথ। শব্দহীন তীরে উর্মিগুলি তালে তালে 
মহামন্দ্রে বাজে, 

সেই ধ্বনি কি করিয়া ধ্বনিয়া তুলিছ মোর 
ক্ষুদ্র বক্ষ মাঝে। 

রাত্রি দিন ধুক্‌ ধুক্‌ হৃদয়পঞ্জর তটে 
অনন্তের ঢেউ, 

অবিশ্রাম বাঁজিতেছে সুগস্তীর সমতানে 
শুনিছে না কেউ! 


৮ 


সোনার তরী । 


আমার এ হৃদয়ের ছোট খাট গ্বীতগুলি, 


শ্নেহ-কলরব, 

তারি মাঝে কে আনিল দিশাহীন সমুদ্রের 
সঙ্গীত ভৈরব! 

তুই কি বাসিস্‌ ভাল আমার এ বক্ষবাসী 
পরাণ-পক্ষীরে ? 

তাই এর পার্খে এসে কাছে বসেছিস্‌ থেঁষে 
অতি ধীরে ধীরে! 

দিনরাত্রি নির্নিমেষে চাহিয়! নেত্রের পানে 
নীরব সাধনা, 

নিন্তষ আদনে বসি একা গ্র আগ্রহভরে 
রুদ্র আরাধন] ! 

চপল চঞ্চল প্রিয়! ধর] নাহি দিতে চাঁয় 
স্থির নাহি থাঁকে, 

মেলি নানাবর্ণ পাখা উড়ে উড়ে চলে যায় 
নব নব শা ও 

তুই তবু একমনে মৌন. একাসনে 
বসি নিরলস । 

ক্রমে সে পড়িবে ধরা, গীত বন্ধ হয়ে যাবে, 


 মানিবে সে বশ! 


তখন কোথায় তারে ভুলায়ে লইয়! যাঁবি 
কোন্‌ শৃন্তপথে ! 


প্রতীক্ষা । ৮৩. 


অচৈতন্ প্রেয়পীরে অবহেলে লয়ে কোলে 
অন্ধকার রথে! 

যেথায় অনাদি রাত্রী রয়েছে চির-কুমারী,__ 
আলোক পরশ 

একটি রোমাঞ্চ রেখা আঁকেনি তাহার গাত্রে 
অসংখ্য বর্ষ) 

স্থজনের পরপ্রান্তে যে অনস্ত অস্তঃপুরে 
কভু দৈববশে 

দুরতম জ্যোতিফের ক্ষীণতম পদরধধবনি 
তিল নাহি পশে; 

সেথায় বিরাট পক্ষ দিবি তুই বিস্তারিয়া 
বন্ধন বিহীন, 

কাপিবে বক্ষের কাছে নবপরিণীতা বধূ 
নৃতন স্বাধীন! 


ক্রমে সে কি ভূলে যাবে ধরণীর নীড় থানি 
তৃণে পত্রে গাথা, 

এ আনন্দ কূর্যালোক, এই স্নেহ, এই গেহ, 
এই পুষ্পপাত। ? 

ক্রমে সে প্রণয়ভরে তোরেও কি করি লবে 
আত্মীয় স্বজন ? 

অন্ধকার বাসরেতে হবে কি ছুজনে মিলি 
মৌন আলাপন ? 


৮৮৪ 


0সানবর তরী 7 


তোর স্নিগ্ধ স্গম্ভীর অচঞ্চল প্রেমমৃদ্ভি, 
অসীম নির্ভর, 

নির্ণিমেষ নীলনেত্র, বিশ্বব্যাপ্ত জটাজুট, 
নির্বাক অধর; 

তার কাছে পৃথিবীর চঞ্চল আনন্দগুলি 
তুচ্ছ মনে হবে, 

সমুদ্রে মিশিলে নদী বিচিত্র তটের স্থৃতি 
স্মরণে কি রবে? 


ওগো মৃত্যু, ওগো! প্রিয়, তবু থাক্‌ কিছুকাল 
ভূবন মাঝারে ! 

এরি মাঝে বধূবেশে অনন্ত বাসর দেশে 
লইযো না তারে ! 

এখনে। সকল গান করে নি সে সমাপন 
সন্ধ্যার প্রভাতে ; 

নিজের বক্ষের তাপে মধূন উত্তপ্ত নীড়ে 
সপ্ত অ+. রাতে; 

পান্থ পাখীদের সাথে এখনো যে যেতে হবে 
নব নব দেশে, 

সিন্ধৃতীরে কুগ্জবনে নব নব বসন্তের 
আনন্দ উদ্দেশে টু 

ওগো মৃত্যু কেন তুই এখনি তাহার নীড়ে 
বসেছিস্‌ এসে ? 


_ প্রতীক্ষা । ৮৫ 


তার সব ভালবাসা আধার করিতে চাস্‌ 
তুই ভালবেসে? 


এ যদি সত্যই হয় মৃত্তিকার পৃথ্থী পরে 


মূহুর্তের খেলা, 

এই সব মুখোমুখী এই সব দেখাশোনা 
ক্ষণিকের মেলা, 

প্রাণপণ ভালবাসা সেও যদি হয় শুধু 
মিথ্যার বন্ধন, 

পরশে খসিয়! পড়ে, তার পরে দণ্ড ছুই 
অরণ্যে ক্রন্দন, 

তুমি শুধু চিরস্থায়ী, তুমি শুধু সীমাশূন্য 
মহা পরিণাম, 

যত আশা যত প্রেম তোমার তিমিরে লভে 
অনস্ত বিশ্রাম, 

তবে মৃত্যু, দূরে যাও, এখনি দিয়োন! ভেঙ্গে 
এ খেলার পুরী, 

ক্ষণেক বিলম্ব কর, আমার ছুশদন হতে 
করিয়ো ন! চুরী! 


একদা নামিবে সন্ধ্যা, বাজিবে আরর্তি শঙ্খ 
অদূর মন্দিরে, 

বিহ্ঙ্গ নীরব হবে, উঠিবে ঝিল্লির ধ্বনি 
অরণ্য গভীরে, 


সোনার তরী । 


সমাপ্ত হইবে কর্ন, সংসার সংগ্রাম শেষে 
জয় পরাজয়, 

আসিবে তন্দ্রার ঘোর পান্থের নয়ন পরে 
ক্লাস্ত অতিশয়,” 

দিনাস্তের শেষ আলো দিগন্তে মিলায়ে যাবে, 
ধরণী আধার, 

সথদূরে জলিবে শুধু অনস্তের. যাত্রাপথে 
প্রদীপ তারার, 

শিয়রে নয়ন-শেষে বসি যারা অনিমেষে 
তাহাদের চোখে 

আসিবে শ্রাস্তির ভার নিদ্রাহীন যামিনীতে 
স্তিমিত আলোকে, 


একে একে চলে যাবে আপন আলয়ে সবে 
সথাতে সথীতে, 

তৈলহীন দীপশিখা নিবিয়া আসিবে ক্রমে 
অদ্ধ রজনীতে, 

উচ্ছৃসিত সমীরণ আনিবে ৬?ন্ধ বহি? 

অন্ধকার পুর্ণ করি আসিবে তরঙ্গধবনি 
অজ্ঞাত কুলের, 

ওগো! মৃত্যু সেই লগ্নে নির্জন শয়নপ্রান্তে 
এসে! বরবেশে, 


গ্রতীক্ষা । ৮৭ 


আঁমাঁর পরাণ বধূ ক্লান্ত হস্ত প্রসারিয়! 
বহু ভালবেসে 

ধরিবে তোমাঁর বাহু ১ তখন তাহারে তুমি 
মন্ত্র পড়ি নিয়ো; 

রক্তিম অধর তার নিবিড় চু্বন দানে 
শা করি দিয়ো! 


১৭ অগ্রহায়ণ, ১৩০০। 


মানস-নুন্দরী । 


আজ কোন কান্ষ নয়)--সব ফেলে দিয়ে 
ছন্দ বন্ধ গ্রস্থ গীত--এস তুমি প্রিয়ে, 
আজন্স-সাধন-ধন স্ন্দরী আমার 
কবিতা, কল্পনা-লতা ! শুধু একবার 
কাছে বস! আজ শুধু কুজন গুঞ্জন 
তোমাতে আমাতে ? শুধু নীরবে তুপ্তন 
এই সন্ধ্যাকিরণের স্বর্ণ মদিরা,-_ 
যতক্ষণ অন্তরের শিরা উপশিরা 

লাবণ্য প্রবাহভরে ভরি” নাহি উঠে, 
যতক্ষণে মহাননে নাহি যায় টুটে। 
চেতনা বেদনাবন্ধ, ভূলে যাই সব 

কি আঁশ! মেটে নি প্রাণে, কি সঙ্গীতরব 
গিয়েছে নীরব হয়ে, কি আনন্দ স্থধা 
অধরের প্রান্তে এসে অন্তরের ক্ষধা 

না মিটায়ে গিয়াছে শুকাঁয়ে এই শাস্তি, 
এই মধুরতা, দিক্‌ সৌম্য শ্লান কাস্তি 
জীবনের দুঃখ দৈত্য অতৃপ্তির পর 

করুণ কোমল আভা গভীর সুন্দর ! 


বীণা ফেলে দিয়ে এস, মানস স্থন্দরী, 
ছুটি রিক্তহস্ত শুধু আলিঙ্গনে ভরি, 


মাঁনস-হুন্দরী | ৮৯ 


কে জড়াইয়। দাও,__মুণাল-পরশে 
রোমাঞ্চ অস্কুরি উঠে মর্খাস্ত হরষে,_- 
কম্পিত চঞ্চল বক্ষ, চক্ষু ছলছল, 

মুগ্ধ তম মরি যায়, অন্তর কেবল 
অঙ্গের সীমান্ত শ্রীস্তে উদ্ভীসিয়া উঠে, 
এখনি ইন্দ্রিয়বন্ধ বুঝি টুটে টুটে! 
অদ্ধেক অঞ্চল পাতি বসাও যতনে 
পার্খে তব; স্তুমধুর প্রিয় সন্বোধনে 
ডাক মোরে, বল, প্রিয়, বল, প্রিয়তম ১-- 
কুস্তল-আকুল মুখ বক্ষে রাখি মম 
হৃদয়ের কানে কানে অতি মুছু ভাষে 
সঙ্গোপনে বলে; যাঁও যাহা মুখে আসে 
অর্থহারা ভাবে-ভরা ভাঁষা ! অগ্বি প্রিয়া, 
চুম্বন মাঁগিব যবে, ঈষৎ হাসিয়া 
বাকায়ো না শ্রীবাখানি, ফিরায়ো না মুখ, 
উজ্জল রক্তিমবর্ণ স্থধাপূর্ণ স্থথ 

রেখো ওষ্ঠাধরপুটে, ভক্ত ভূঙ্গ তরে 
সম্পূর্ণ চুষ্বন এক, হাসি স্তরে স্তরে 
সরস স্থন্দর ?--নবস্ফুট পুষ্পসম 

হেলায়ে বঙ্কিম শ্রীবা বৃস্ত নিরুপম 
মুখখানি তুলে, ধোরো) আনন্দ আভায় 
বড় বড় ছুটি চক্ষু পল্পবংপ্রচ্ছায় | 
রেখো মোর মুখপানে প্রশান্ত বিশ্বাসে,. 
নিতান্ত নির্ভরে! যদি চোকে জল আসে 


2১০ 


সোনার তরী | 


কাদিব দুজনে ১ যদি ললিত কপোলে 

মৃছ হাসি ভাসি উঠে, বসি মোর কোলে, 
বক্ষ বাঁধি বাহুপাশে, স্কন্ধে মুখ রাখি 
হাসিয়ে! নীরবে অর্ধ-নিমীলিত আখি ; 
যদ্দি কথা পড়ে মনে তবে কলম্বরে 

বলে যেয়ো কথা, তরল আনন্দ ভরে 
নির্বরের মত, অর্জেক রজনী ধরি, 

কত ন! কাহিনী স্থৃতি কন লহরী 
মধুমাখা কণ্ঠের কাকলি? যদি গান 

ভাল লাগে, গেয়ো গান; যদি যুদ্ধ প্রাণ 
নিঃশব্দ নিস্তব্ধ শান্ত সম্মুখে চাহিয়া 

বসিয়ী থাকিতে চাও, তাহ রব প্রিয় ! 
হেরিব অদূরে পদ্মা, উচ্চ তটতলে 

শ্রান্ত রূপসীর মত বিস্তীর্ণ অঞ্চলে 
প্রসারিয়া তন্ুখানি, সায়াহ-আলোকে 
শুয়ে আছে; অন্ধকার নেমে আমে চোখে 
চোখের পাতার মত 7 সন্ধযাত:র1 ধীরে, 
সন্তর্পণে করে পদার্পণ, নদ” ন্বরে 
অরণ্যশিয়রে 7 যামিনী শরন তার 

দেয় বিছাইয়া, এক খানি অন্ধকার 

অনন্ত ভূবনে। দৌহে মোরা রব চাহি" 
অপার তিমিরে ;) আর কোথ। কিছু নাহি, 
শুধু মোর করে তব করতল খানি, 

শুধু অতি কাছাকাছি ছুটি জন প্রাণী 


মানস-্থন্দরী | ৯১ 


অসীম নির্জনে 3 বিষগ্র বিচ্ছেদরাশি 
চরাচরে আর সব ফেলিয়াছে গ্রাসিঃ 
শুধু এক প্রান্তে তার প্রলয়-মগন 
বাকি আছে একখানি শঙ্কিত মিলন, 
ছুটি হাত, ত্রস্ত কপোঁতের মত ছুটি 
বক্ষ ছুরুছরু, ছুই প্রাণে আছে ফুট, 
শুধু এক খানি ভয়, এক খানি আশা, 
এক খানি অশ্রভরে নত্র ভালবাস! । 


আজিকে এমনি তবে কাটিবে যামিনী 
আলম্ত বিলাসে। অফ্ষি নিরভিমানিনী, 
অগ্ি মোর জীবনের প্রথম প্রেয়সী, 
মোর ভাগ্য-গগনের সৌন্দর্য্যের শশি, 
মনে আছে, কবে কোন্‌ ফুল্ল যৃখী বনে, 
বহু বাল্যকাঁলে, দেখা হত দুই জনে 
আধ চেনা-শোনা” ? তুমি এই পৃথিবীর 
প্রতিবেশিনীর মেয়ে, ধরার অস্থির 

এক বালকের সাথে কি খেল! খেলাতে 
সখি, আসিতে হাসিয়া, তরুণ প্রভাতে 
নবীন বালিক। মৃক্তি, শুভ্রবন্ত্র পরি”. 
উধার কিরণ ধারে সগ্ভঃন্নান করি, 


৭১২, 


সোনার তরী । 


বিকচ কুস্থমসম ফুল্প মুখখানি 

নিদ্রাভঙ্গে দেখা দিতে, নিয়ে যেতে টানি, 
উপবনে কুড়াতে শেফালি। বারে বারে 
শৈশব-কর্তব্য হতে ভুলাঁয়ে আমারে, 
ফেলে দিয়ে পু'থিপত্র, কেড়ে নিয়ে খড়ি, 
দেখায়ে গোপন পথ দিতে মুক্ত করি 
পাঠশালা কারা হতে ; কোথা গৃহকোণে 
নিয়ে যেতে নির্জনেতে রহস্ত-ভবনে ; 
জনশূন্য গৃহ্ছাদে আকাশের তলে 

কি করিতে খেলা, কি বিচিত্র কথ! বলে, 
ভুলাঁতে আমারে, স্বপ্রসম চমৎকার 
অর্থহীন, সত্য মিথ্যা তুমি জান তার। 
ছুটি কর্ণে ছুলিত মুকুতা, ছুটি করে 
মোনার বল, ছুটি কপোলের পরে 
খেলিত অলক, ছুটি স্বচ্ছ নেত্র হতে 
কাপিত আলোক, নির্মল নির্ঝর শোতে 
চুর্ণরশ্মিসম | দৌহে দৌহা ভা. করে, 
চিনিবার আগে নিশ্চিন্ত নি: ।সভরে 
খেলাধুল1 ছুটাছুটি ছজনে সতত, 
কথাবার্তী বেশবান বিথাঁন বিতত। 


তার পরে এক দিিন--কি জানি সে কবে-_- 
জীবনের বনে, যৌবন-বসস্তে যবে 


মানস-স্থন্দরী | ৯৩ 


প্রথম মলয় বায়ু ফেলেছে নিশ্বাস, 
যুকুলিয়া উঠিতেছে শত নব আশ, 
সহসা চকিত হয়ে আপন সঙ্গীতে 
চমকিয়া হেরিলাম--খেলাক্ষেত্র হতে 
কথন্‌ অস্তর-লক্মী এসেছ অন্তরে 
আপনার অস্তঃপুরে গৌরবের ভরে 
বসি আছ মহিষীর মত! কে তোমারে 
এনেছিল বরণ করিয়া? পুরদ্ারে 

কে দিয়াছে হুনুধ্বনি ? ভরিয়া অঞ্চল 
কে করেছে বরিষণ নব পুষ্পদ্ল 
তোমার আনম শিরে আনন্দে আদরে ? 
সুন্দর সাহানা রাগে বংশীর স্ুম্বরে 

কি উৎসব হয়েছিল আমার জগতে, 
যে দিন প্রথম তুমি পুষ্পফুল্ল পথে 
লঙ্জামুকুলিত মুখে রক্তিম অশ্বরে 

বধু হয়ে প্রবেশিলে চির দিন তরে 
আমার অস্তর গৃহে_-যে গুপ্ত আলে 
অন্তর্যামী জেগে আছে স্থথ ছুঃথ লয়ে, 
যেখানে আমার যত লজ্জা আশা ভয় 
সদা কম্পমান, পরশ নাহিক সয় 

এত স্থকুমার ৷ ছিলে খেলার সঙ্গিনী, 
এখন হয়েছ মোর মর্ম্ের গৃহিণী, 
জীবনের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। কোথা সেই 
অমূলক হানি অশ্রু, সে চাঞ্চল্য নেই, 


৭১৪ 


সোনার তরী । 


সে বাহুল্য কথা। স্নিগ্ধদৃষ্টি সুগভীর 
স্বচ্ছনীলাম্বর সম; হাসিখানি স্থির 
অশ্রু শিশিরেতে ধৌত ১ পরিপূর্ণ দেহ 
মঞ্জরিত বল্লরীর মত; প্রীতি স্েহ 
গভীর সঙ্গীত তাঁনে উঠিছে ধ্বনিয়! 

স্বর্ণ বীণা-তন্ত্রী হতে রনিয়! রনিয়। 
অনস্ত বেদনা বহি । সে অবধি প্রিয়ে, 
রয়েছি বিন্মিত হয়ে তোমারে চাহিয়ে 
কোথাও না পাই অন্ত! কোন্‌ বিশ্বপার 
আছে তব জন্মভূমি? সঙ্গীত তোমার 
কত দূরে নিয়ে যায়, কোন্‌ কল্পলোকে 
আমারে করিবে বন্দী, গানের পুলকে 
বিমুগ্ধ কুরঙ্গ সম? এই যে বেদনা 

এর কোন ভাষা আছে ? এই যে বাসন। 
এর কোন তৃপ্তি আছে? এই যে উদার 
সমুদ্রের মাঝখানে হয়ে কর্ণধার 
ভাসায়েছ সুন্দর তরণী; দশ নিশি 
অস্ফুট কল্লোল ধ্বনি চির দবানিশি 

কি কথা বলিছে কিছু নারি বুঝিবারে, 


এর কোন কুল আছে? সৌন্দর্য্য পাথারে 


যে বেদনা-বায়ু-ভরে ছুটে মনোতরী, 
সে বাতাসে, কত বার মনে শঙ্কা করি 
ছিন্ন হয়ে গেল বুঝি হৃদয়ের পাল, 
অভয় আশ্বান ভর! নয়ন বিশাল 


মানস-স্ন্দরা । ৮৬. 


হেরিয়! ভরস। পাই ? বিশ্বাস বিপুল 
জাগে মনে--আঁছে এক মহা! উপকূল 
এই সৌন্দর্যের তটে, বাসনার তীরে 
মোদের দোহার গৃহ! 


হাসিতেছ ধীরে 
চাহি মোর মুখে, ওগো রহস্তমধুরা ! 
কি বলিতে চাহ মোরে প্রণয়বিধুরা 
সীমস্তিনী মোর? কি কথা বুঝাঁতে চাও? 
কিছু বলে” কাজ নাই-শুধু ঢেকে দাও 
আমার সর্বাঙ্গমন তোমার অঞ্চলে, 
সম্পূর্ণ হরণ করি লহ গে৷ সবলে 
আমার আমারে; নগ্ন বক্ষে বক্ষ দিয়া 
অন্তর-রহস্ত তব শুনে নিই প্রিয়! 
তোমার হৃদয়কম্প অঙ্কুলির মত 
আমার হৃদয়তন্ত্রী করিবে প্রহত, 
সঙ্গীত তরঙ্গ ধ্বনি উঠিবে গুঞ্জরি” 
সমস্ত জীবন ব্যাপি” থর থর করি?! 
নাই বা! বুঝিন্থ কিছু, নাই বা বলিঙ্গ, 
নাই বা গীথিন্থ গান, নাই বা চলিনু 
ছন্দোবন্ধ পথে, সলজ্জ হৃদয় খানি 
টানিয়! বাহিরে ! শুধু ভুলে গিয়ে বাণী 
কাপিব সঙ্গীত ভরে, নক্ষত্রের প্রায় 
হার জলিব শুধু কম্পিত শিখায়, 


রি 


সোনার তরী । 


শুধু তরঙ্গের মত ভাঙ্গিয়া পড়িব 
তোমার তরঙ্গ পানে, বাচিব মরিব 
শুধু, আর কিছু করিব না! দাও সেই 
প্রকাঁও প্রবাহ, যাহে এক মুহূর্তেই 
জীবন করিয়া! পুর্ণ, কথা না বলিয়া 
উন্মত্ত হইয়া যাই উদ্দাম চলিয়। ! 


মানসীরূপিনী ওগে!, বাসনা-বাঁসিনী, 
আলোকবসন। ওগো, নীরবভাষিণী, 
পরজন্মে তুমি কিগে! মৃত্তিমতী হয়ে 
জন্মিবে মানব গৃহে নারীরূপ লয়ে 
অনিন্দ্য সুন্দরী? এখন ভাসিছ তুমি 
অনন্তের মাঝে; স্বর্গ হতে মর্ত্যতূমি 
করিছ বিহার ; সন্ধ্যার কনক বর্ণে 
রাঙ্গিছ অঞ্চল; উবার গলিত স্বর্ণে 
গড়িছ মেখল1) পুর্ণ তটিনীর জলে 
করিছ বিস্তার, তলতল চদ ছলে 
ললিত যৌবন খানি; ধসস্ত বাতাসে 
চঞ্চল বাসনা ব্যথা স্থগন্ধ নিশ্বাসে 
করিছ প্রকাশ? নিস্গপ্ত পুণিমা রাতে 
নির্জন গগনে, একাকিনী ক্লান্ত হাতে 
বিছাইছ ছুপ্ধশুত্র বিরহ শয়ন! 
শরৎ প্রত্যুষে উঠ্ভি করিছ চন 


মানস-স্থন্দরী | টিটি, 

শেফাঁলি, গাঁথিতে মালা, ভুলে গিয়ে শেষে, 
তরুতলে ফেলে দিয়ে, আলুলিত কেশে 
গভীর অরণ্য ছায়ে উদাসিনী হয়ে 
বসে থাক) ঝিকিমিকি আলো ছায়া লয়ে 
কম্পিত অশ্কুলি দিয়ে বিকল বেলায় 
বসন বয়ন কর বকুল তলায়! 
অবসন্গ দ্রিবালোৌকে কোথা হতে ধীরে 
ঘন পল্লবিত কুগ্জে সরোবর তীরে 
করুণ কপোত কণ্ঠে গাও মূলতান ! 
কখন্‌ অজ্ঞাতে আসি ছু'য়ে যাও প্রাণ 
সকৌতুকে ; করি দাঁও হৃদয় বিকল, 
, অঞ্চল ধরিতে গেলে পালাও চঞ্চল 

কলকঠে হাসি”, অসীম আকাজ্ষা রাশি 
জাগাইয়। প্রাণে, দ্রুতপদে উপহাসি 
মিলাইয়। যাও নভোনীলিমার মাঝে । 
কখনো মগন হয়ে আছি যবে কাজে 
স্থলিত-বসন তব শুভ্র রূপথানি 
নগ্ন বিছ্যতের আলো! নয়নেতে হানি 
চকিতে চমকি” চলি যায়! জানালায় 
একেলা বসিয়া যবে আঁধার সন্ধ্যায়, 
মুখে হাত দিয়ে, মাতৃহীন বালকের 
মত, ঘহুক্ষণ কাঁদি, স্নেহ আলোকের 
তরে; ইচ্ছা করি, নিশার আঁধার আোতে 
মুছে ফেলে দিয়ে যায় স্ৃষ্টিপট হতে 





পপ পতি 
গল 7৮, ৭7 কাহিয়। বাণী 
পানা ভরিয়া পাঁণে কবিরে তোমার 


ঘুম পাড়াইয়া দিয়! কখন্‌ আবার 
চলে যাও নিঃশব্দ চরণে ! 


সেই তুমি 
মুক্তিতে দিবে নি না? এই মর্তৃত্যমি 
পরশ করিবে উ। চরণের তলে? 


অন্তরে বাহিছে বিশ্বে শুন্তে জলে স্থলে 
সবর্ব ঠাই হতে, সর্বময়ী আপনারে 
করিয়া হতণ-_-্ধরণীর এক ধারে 

ধরিবে কি একথাঁনি মধুর মূরতি ? 

নদী হতে লতা হতে আনি তব গতি 
অঙ্গে অঙে নানা ভঙ্গে দিবে হিল্লোলিয়। 
বাহুতে বাঁকিয়া পড়ি” শ্রীরায় হেলিয়া 
ভাবের বিকাশ ভরে ? কি নীল বসন 
পরিবে স্গন্দরী তুমি ? কেমন কক্কণ 





মী দেয়_নব নীল অতি সুকুমার, 
সে দৃষ্টি না জানি ধরে কেমন আকার 
নারীচক্ষে! কি সঘন পল্লবের ছায়, 
কি সুদীর্ঘ কি নিবিড় তিমির আভাঁয় 
ুপ্ধ অন্তরের মাঝে ঘনাইয়া আনে 
সুখ বিভাবরী ? অধর কি স্ুধাদানে 
রহিবে উন্মুখ, পরিপূর্ণ বাঁণীভরে 
নিশ্চল নীরব। লাবণ্যের থরে থরে 
অঙ্গথানি কি করিয়! মুকুলি' বিকশি” 
অনিবার সৌনর্য্যেতে উঠিবে উচ্ছৃি+ 
নিঃদহ যৌবনে ! 


জানি, আমি জানি, সখি, 
যদি আমাদের দৌঁহে হয় চোঁখোচোখি 
সেই পরজন্ম-পথে,__ীড়াঁৰ থমকি+, 
নিত্রিত অতীত কীপি' উঠিবে চমকি' 
লভিয়া চেতনা !__জানি মনে হবে মম 
চির-জীবনের মোর ঞ্বতারা সম 


৬৩ 


সোনার তরী। 


চিরপরিচয়-তরা এ কালো চোখ! 
আমার নয়ন হতে লইয়া আলোক, 
আমার অন্তর হতে লইয়া বাসনা 
আমার গোপন প্রেম করেছে রচনা 
ই মুখখানি । তুমিও কি মনে মনে 
চিনিবে আমারে ? আমাদের ছুই জনে 
হবে কি মিলন ? ছুটি বাহু দিয়ে বালা 
কখনো কি এই কণ্ঠে পরাইবে মালা 
বসস্তের ফুলে ? কখনো কি বক্ষ ভরি 
নিবিড় বন্ধনে, তোমারে হৃদয়েশ্বরী 
পারিব বাঁধিতে ? পরশে পরশে দৌহে 
করি বিনিময়, মরিব মধুর মোহে 
দেহের হুয়ারে ? জীবনের প্রতিদিন 

মার আলোক পাবে বিচ্ছেদবিহীন, 
জীবনের প্রতি রাত্রি হবে সুমধুর 
মাধুধ্যে তোমার ' 'জিবে তোমার সুর 
সব্ব দেহে মনে জীবনের প্রতি স্থথে 
পড়িবে তোমার শুভ্র হাসি, প্রতি ছথে 
পড়িবে তোমার অশ্রজল ! প্রতি কাজে 
রবে তব শুভহস্ত ছুটি। গৃৃহমাঝে 
জাঁগাঁয়ে রাঁথিবে সদা জুমঙ্গল জ্যোতি। 
ভ্রু শুধু বাসনার বিফল মিনতি, 


মানস-স্থন্দরী | ১০১ 


কল্পনার ছল? কার এত দিব্যজ্ঞান, 

কে বলিতে পারে মোরে নিশ্চয় প্রমাণ--_ 
পুর্বজন্মে নারীরূপে ছিলে কি ন! তুমি 
আমারি জীবন-বনে সৌন্দর্য্যে কুন্ুমি” 
প্রণয়ে বিকশি”? মিলনে আছিলে বাঁধা 
শুধু এক ঠাই, বিরহে টুটিয়া বাধ 

আজি বিশ্বময় ব্যাপ্ত হয়ে গেছ, পরিয়ে, 
তোমারে দেখিতে পাই সর্বত্র চাহিয়ে ! 
ধুপ দগ্ধ হয়ে গেছে, গন্ধবাম্প তার 

পূর্ণ করি ফেলিয়াছে আজি চারি ধার! 
গৃহের বনিত। ছিলে--টুটিয়া আলয়. ' 
বিশ্বের কবিতারূপে হয়েছ উদয়, 

তবু কোন্‌ মায়া-ডোরে চির-সোহাগিনী 
হৃদয়ে দিয়েছ ধরা, বিচিত্র রাগিণী 
জাগায়ে তুলিছ প্রাণে চিরস্থৃতিময় ! 

তাই ত এখনো! মনে আশা জেগে রয় 
আঁবার তোমারে পাব পরশ বন্ধনে! 
এমনি সমস্ত বিশ্ব প্রলয়ে ক্জনে 

অলিছে নিবিছে, যেন খগ্চোতের জ্যোতি! 
কখনো! বা ভাবময়, কখনো মূরতি। 


রজনী গভীর হল, দীপ নিবে আসে) 
পল্মার সুদুর পারে পশ্চিম আকাশে 


৯০২. 


সোনার তরী । 


কখন্‌ যে সায়্াহ্নের শেষ স্বর্ণরেখ। 
মিলাইয়! গেছে, সপ্তধি দিয়েছে দেখ 
তিমির গগনে, শেষ ঘট পূর্ণ করে, 
কখন্‌ বাঁলিক1 বধূ চলে” গেছে ঘরে,_- 
হেরি” কৃষ্ণপক্ষ রাত্রি একাদশী তিথি 
দীর্ঘপথ শৃশ্তক্ষেত্র হয়েছে অতিথি 

গ্রামে গৃহস্থের ঘরে পাস্থ পরবাসী, 
কখন্‌ গিয়েছে থেমে কলরব রাশি 
মাঠপারে কৃষি-পল্লি হতে, নদীতীরে 
বৃদ্ধ কৃষাণের জীর্ণ নিভৃত কুটারে 
কখন্‌ জলিয়াছিল সন্ধ্যাদীপ খানি, 
কখন্‌ নিভিয়া গেছে__কিছুই না জানি ! 


কি কথা বলিতেছিন্ু, কি জানি, প্রেয়সি, 


_অর্ধ-অচেতন ভাবে মনে!ম।ঝে পশি" 


্বপ্রমুগ্ধ মত! কেহ উণেছিলে সে কি, 
কিছু বুঝেছিলে প্রিরে, কোথাও আছে কি 
কোন অর্থ তার? সব কথা গেছি ভুলে, 
শুধু এই নিদ্রাপূর্ণ নিশীথের কুলে 

অন্তরের অন্তহীন অশ্র-পারাবার 

উদ্বেলিয়া উঠিয়াছে হৃদয়ে আমার 

গম্ভীর নিস্বনে ! 


মানস-স্ুন্দরা ] ১০৩ 


এস সুপ্তি, এস শাস্তি, 
এস পরিয়ে, মুগ্ধ মৌন সকরুণ কাস্তি, 
বক্ষে মোরে লহ টানি,_শোয়াও যতনে 
মরণ-সুন্নিগ্ধ শুভ্র বিস্থৃতি শয়নে ! 


৪ পৌষ, ১২৯৯। 


অনাদূত। 


ভখন তরুণ রবি প্রভাত কালে 
আনিছে উষার পূজা সোনার থালে। 
সীমাহীন নীল জল 
করিতেছে থলথল, 
রাঁডা রেখা জলজল 
কিরণ মালে । 
তখন উঠিছে রবি গগন ভালে। 


গাথিতেছিলাম জাল বাসিয়! তীরে । 
বারেক অতল পানে চাহিন্থ ধীরে; 
শুনিনু কাহার বাণী, 
পরাণ লইল টানি”, 
যতনে সে জালখানি 
তুলিয়া শিরে 
 খুরায়ে ফেলিয়া দিমু সুদূর নীরে। 


অনাদূত । ১০৫ 


নাহি জানি কত কি যে উঠিল জালে! 
কোনটা হাসির মত কিরণ ঢালে, 
কোনটা বা! উলটল 
কঠিন নয়ন জল, 
কোনটা সরম ছল 
বধূর গালে! 
সে দিন সাগর তীরে প্রভাত কালে ! 


বেলা বেড়ে ওঠে, রবি ছাড়ি” পরবে 
গগনের মাঝ খানে ওঠে গরবে। 
ক্ষুধা তৃষণ সব ভুলি” 
জাল ফেলে টেনে তুলি, 
উঠিল গোধূলি ধুলি 
ধূসর নভে । 
গাঁভীগণ গৃহে ধাঁয় হরষ রবে। 


লয়ে দিবসের ভার ফিরিঙ্ছ ঘরে, 
তখন উঠিছে টাদ আকাশ পরে । 
গ্রামপথে নাহি লোক, 
পড়ে আছে ছায়ালোক, 
মুদে আসে ছুটি চোখ 
স্বপন ভরে; 
ডাকিছে বিরহী পাখী কাতর স্বরে। 


৯০৬ 


সোনার তরী । 


সে তখন গৃহকাজ সমাধা করি? 
কাননে বপিয়াছিল মাঁলাটি পরি” । 
কুম্থম একটি ছুটি 
তরু হতে পড়ে টুটি”, 
সে করিছে কুটিকুটি 
নথেতে ধরি”; 
আলসে আপন মনে সময় হরি'। 


বারেক আগিয়ে যাই' বারেক পিছু । 
কাছে গিয়ে ধাড়ালেম নয়ন নীচু । 
যা ছিল চরণে রেখে 
ভূমিতল দিন্থ ঢেকে ? 
সে কহিল দেখে দেখে 
“চিনিনে কিছু 1৮ 
শুনি” রহিলাম শির করিয়া নীচু ! 


ভাবিলাম, সারাদিন -।রাটি বেলা 
বসে বসে” করিয়াছি কি ছেলেখেল ! 
না জানি কি মোহে ভুলে? 
গে অকুলের কুলে, 
বাঁপ দিয়ে কুতৃহলে 
আনিন্ু মেল! 
অজানা! সাগর হতে অজানা ঢেলা! 


অনাদূত। রি 


ঘুঝি নাই, খুঁজি নাই হাটের মাঝে, 
এমন হেলার ধন দেওয়া কি সাজে? 
কোন ছুথ নাহি যার, 
কোন তৃষা বাসনার, 
এ সব লাঁগিবে তার 
কিসের কাজে? 
কুড়ায়ে লইন্ু পুন মনের লাজে! 


সারাটি রজনী বসি ছুয়ার দেশে 
একে একে ফেলে দিন পথের শেষে! 
স্থথহীন ধনহীন 
চলে গেন্থু উদাসীন; 
প্রভাতে পরের দিন 
পথিকে এসে, 
সব তুলে নিয়ে গেন আপন দেশে! 


২২ ফাল্তন, ১২৯৯। 


নদী পথে। 


গগন ঢাক ঘন মেঘে, 
পবন বহে খর বেগে। 
অশনি ঝনঝন 
ধ্বনিছে ঘনঘন 
নদীতে ঢেউ উঠে জেগে, 
পবন বহে খর বেগে! 


তীরেতে তরুরাজি দোলে 
আকুল মর্শর রোলে। 
চিকুর চিকিমিকে 
চকিয়া দিকে দিকে 
তিমির চিরি” যায় চলে?। 
তীরেতে তরুরাঁজি দে'ণে। 


ঝরিছে বাদলের ধারা 
বিরাম বিশামহারা। 
বারেক থেমে আসে? 
দ্বিগুণ উচ্ছাসে 
আবার পাগলের পার! 
ঝরিছে বাদলের ধারা । 


নদী পথে। ১০৯ 


মেঘেতে পথরেখ। লীন, 
প্রহর তাই গতিহীন । 
গগন পানে চাই, 
জানিতে নাহি পাই . 
গেছে কি নাহি গেছে দিন 3 
প্রহর তাই গতিহীন। 


তীরেতে বাধিয়াছি তরী, 
বুয়েছি সারাদিন ধরি” । 
এখন পথ নাকি: 
অনেক আছে বাকি, 
আসিছে ঘোর বিভাবরী । 
তীরেতে বাধিয়াছি তরী । 


বসিয়া তরণীর কোণে 
একেলা ভাবি মনে মনে 
মেঝেতে শেজ পাতি” 
দে আজি জাগে রাতি 
নিদ্রা নাহি ছু নয়নে । 
বসিয়া ভাবি মনে মনে। 


১৯০ 


সোনার তরী। 


মেঘের ডাক শুনে কাঁপে, 
হৃদয় ছুই হাঁতে চাঁপে। 
আকাশ পানে চায় 
ভরসা! নাহি পাঁয়, 
তরাসে সারা নিশি যাঁপে, 
মেঘের ডাঁক শুনে কাপে! 


কভু বা বাযুবেগভরে 
ছুয়ার ঝন্ঝনি” পড়ে । 
প্রদীপ নিবে আসে, 
ছায়াটি কাঁপে ত্রাসে, 
নয়নে আঁখিজল ঝরে, 
বক্ষ কাঁপে থর থরে। 


চকিত আখি ছুটি তার 
মনে আসিছে বার বার । 
বাহিরে মহা ঝড়, 
ব্জ কড় মড়, 
আকাশ করে হাহাকার । 
মনে পড়িছে আঁখি তার। 


নদী পথে। ১১১ 


গগন ঢাকা ঘন মেঘে, 
পবন বহে খর বেগে। 
অশনি ঝন ঝন 
ধ্বনিছে ঘন ঘন 
নদীতে ঢেউ উঠে জেগে। 
পবন বহে আজি বেগে। 


২৩ ফ্কান্তম, ১২৯৯। 


দেউল! 


রচিয়াছিহ্ন দেউল একখানি 
অনেক দিনে অনেক ছুখ মানি, । 
রাখি নি তার জানাল! দ্বার, 
সকল দিক অন্ধকার, 
ভূধর হ'তে পাষাণ ভার 
যতনে বহি” আনি” 
রচিয়াছিন্থ দেউল একখানি । 


দেবতাটিরে বসায়ে মাঝখানে 
ছিলাম চেয়ে তাহারি মুখপানে। 
বাহিরে ফেলি এ ত্রিভূবন 
ভুলিয়৷ গিয়ে বিশ্বজন 
ধেয়ান তারি অন্ুক্ষণ 
করেছি এক প্রাণে, 
দেবতাটিরে বসায়ে -ঝখানে। 


যাপন করি অন্তহীন রাতি 
জালায়ে শত গন্ধময় বাতি । 
কনক-মণি-পাত্রপুটে, 
সুরভি ধূপ-ধুঅ উঠে, 
গুরু অগুরু-গন্ধ ছুটে, 
পরাণ উঠে মাতি?। 
যাপন করি অত্তহীন রাঁতি। 


দেউল। ১১৩ 


নিদ্রাহীন বসিয়া এক চিতে 
চিত্র কত একেছি চারি ভিতে। 
স্বপ্ন সম চমতকার 
কোথাও নাহি উপম। তার, 
কত বরণ, কত আকার 
কে পারে বরণিতে, 
চিত্র যত এঁকেছি চারি ভিতে ! 


স্তস্তগুলি জড়ায়ে শত পাকে 
নাগবালিক! শ্রীব। তুলিয়া থাকে। 
উপরে ঘিরি চাঁরিটি ধার 
দৈত্যগুলি বিকটাঁকার, 
পাষাণময় ছাদের ভার 
মাথায় ধরি রাখে। 
নাগবালিক? গ্রীবা তুলিয়া! থাকে। 


স্থষ্টিছাড়া স্থজন কত মত! 
পক্ষীরাজ উড়িছে শত শত। 
ফুলের মত লতার মাঝে 
নারীর মুখ বিকশি বাজে, 
প্রণয়ভরা বিনয়ে লাঁজে 
নয়ন করি” নত, 
থষ্টিছাঁড়া স্থজন কত মত। 


১১৪ সোঁনার তরী । 


ধ্বনিত এই ধরার মাঝখানে 
শুধু এ গৃহ শব্ধ নাহি জানে। 
ব্যাত্াজিন আমন পাতি 
বিবিধরূপ ছন্দ গাঁখি” 
মন্ত্র পড়ি দিবস রাতি 
গুঞ্জরিত তানে, 
শব্দহীন গৃহের মাঝখানে । 


এমন করে গিয়েছে কত দিন 
জানি নে কিছু আছি আপন-লীন। 
চিত্ত মোর নিমেষ-হত 
উদ্ধমুখী শিখার মত, 
শরীর খানি মৃচ্ছাহত 
ভাবের তাপে ক্ষীণ। 
এমন করে গিয়েছে কত দিন। 


একদা এক বিষম ৮" স্বরে 
বজজ আসি পড়িল মোর ঘরে। 
বেদনা এক তীক্ষতম 
পশিল গিয়ে হৃদয়ে মম 
অগ্নিময় সর্প ষঘম 
_কাটিল অন্তরে । 
বজ্জ আমি পড়িল মোর ঘরে। 


দেউল । ১১৫ 


পাষাণরাশি সহসা গেল টুটি”, 
গৃহের মাঝে দ্রিবস উঠে ফুটি। 
নীরব ধ্যান করিয়া চুর 
কঠিন বাঁধ করিয়। দূর 
ংসাব্রের অশেষ সুর 
ভিতরে এল ছুটি”, 
পাধাণরাশি সহস! গেল টুটি”। 


দেবতাপানে চাহিক্ক একবার, 
আলোক আসি পড়েছে মুখে তার । 
নৃতন এক মহিনানাশি 
ললাটে তাঁর উঠেছে ভাসি”, 
জাগিছে এক প্রসাদ হাসি 
অধর চারিধার। 
দেবতাপানে চাহিন্ু একবার । 


সরমে দীপ মলিন একেবারে 
লুকাতে চাহে চির অন্ধকারে । 
শিকলে বাঁধ। স্বপ্নমত 
ভিত্তি-আক1 চিত্র যত 
আলোক দেখি লঙ্জীহত 
পালাতে নাহি পারে, 
সরমে দীপ মলিন একেবারে । 


১১৬ সোনার তরী । 


যে গীন আমি নারিন্ু বচিবারে 
দে গান আজি উঠিল চারিধারে। 
আমার দীপ জাঁলিল রবি, 
প্রকৃতি আসি আকিল ছবি, 
গাথিল গান শতেক কবি 
কতই ছন্দ হারে, 
কি গান আজি উঠিল চারিধারে ! 


দেউলে মোর ছুয়ার গেল খুলি” 
ভিতরে আর বাহিরে কোলাকুলি, 
দেবের কর-পরশ লাগি” 
দেবতা মোর উঠিল জাগি” 
বন্দী নিশি গেল সে ভাগি” 
আঁধার পাখা তুলি?। 
দেউলে মোর ছুয়ার গেল খুলি! । 


২৩ ফাঁন্তন, ১২৯৯। 


 পরিশ্বনৃত্য। 


বিপুল গভীর মধুর মন্দ্রে 

কে বাঁজাবে সেই বাজনা ! 
উঠিবে চিত্ত করিয়! নৃত্য 

বিস্বত হবে আপনা ! 
টুটিবে বন্ধ, মহা আনন্দ, 
নব সঙ্গীতে নূতন ছন্দ, 
হৃদয় সাগরে পূর্ণচন্র 

জাগাবে নবীন বাসনা । 


সঘন অশ্রমগন হাস্ত 
জাগিবে তাহার বদনে। 

প্রভাঁত-অরুণ-কিরণ-রশ্মি 
ফুটিবে তাহার নয়নে ! 

দক্ষিণ করে ধরিয়৷ যন্ত্র 

ঝনন-রণন স্বর্ণ তন্ত্র, 

কাপিয়। উঠিবে মোহন মন্ত্র 
নির্মল নীল গগনে । 


৯১৮ 


পোনার তরী। 


হাহা করি সবে উচ্ছল রবে 
চঞ্চল কলকলিয়া, 
চৌদিক হতে উন্মাদ শ্রোতে 
আসিবে তৃর্ণ চলিয়া । 
ছুটিবে সঙ্গে মহা তরঙ্গে 
ঘিরিয়া তাহারে হরষ রঙ্গে 
বিদ্রতরণ চরণ ভঙ্গে 
পথরুণ্টক দলিয় ৷ 


দ্যুলোক, চাহিয়া সে লোকসিন্কু 
বন্ধনপাশ নাশিবে, 
অসীম পুলকে বিশ্ব-ভুলোকে 
অস্কে তুলিয়! হাসিবে। 
উর্মি-লীলায় সুর্য কিরণ 
ঠিকরি উঠিবে হিরণ বরণ, 
বিশ্ব বিপদ ছুঃখ মরণ 
ফেনের মতন ভাঁসিবে। 


ওগে৷ কে বাজায় (বুঝি শুনা যায় ! 
মহ রহস্তে রসি 

চিরকাল ধরে” গম্ভীর স্বরে 
অন্বরপরে বসিয়া ! 


বিশ্বনৃত্য | ১১৯ 


গ্রহমগ্ুল হয়েছে পাগল, 

ফিরিছে নাচিয়! চিরচঞ্চল, 

গগনে গগনে জ্যোতি অঞ্চল 
পড়িছে খপিয়া খসিয়া । 


ওগে। কে বাজায় (কে শুনিতে পায়!) 
না জানি কি মহা রাগিণী! 
ছলিয়া ফুলিয়া নাচিছে সিক্কু 
সহজ্রশির নাগিনী। 
প্যন অরণ্য আনন্দে ছুলে, 
অনন্ত নভে শত বাহু তুলে, 
কি গাঁহিতে গিয়ে কথা যায় ভুলে” 
মন্মরে দিন যামিনী! | 


নির্ঝর ঝরে উচ্ছ্বান ভরে 
বন্ধুর শিলা-সরণে। 
ছন্দে ছন্দে সুন্দর গতি 
পাষাণ হৃদয় হবণে ! 
কোমল কণ্ে কুলু কুলু স্থর, 
ফুটে অবিরল তরল মধুর, 
সদা-শিঞ্জিত মাণিক নুপুর 
বাধা চঞ্চল চরণে! 


১২০ 


সোনার তরী । 


নাচে ছয় খতু না মানে বিরাম, 
বাহুতে বাহুতে ধরিয়! ৷ 
শ্যামল, স্বর্ণ, বিবিধ বর্ণ 
নব নব বাদ পরিয়া। 
চরণ ফেলিতে কত বনফুল 
ফুটে ফুটে টুটে হইয়া আকুল, 
উঠে ধরণীর হৃদয় বিপুল 
হাঁসি ক্রন্দনে ভরিয়া! ! 


পশু বিহঙ্গ কীট পতঙ্গ 
জীবনের ধার! ছুটিছে। 


.. কি মহা খেলায় মরণ-বেলায় 


তরঙ্গ তার টুটিছে! 
; কানখানে আলো কোনথানে ছায়া, 
জেগে জেগে ওঠে নব নব কায়া, 
চিল? 

বুদদ সম ফুটিছে। 


ওই কে বাজায় দিবস নিশায় 
বনি অন্তর আসনে 
কালের যন্ত্রে বিচিত্র স্থর, 
কেহ শোনে কেহ না শোনে! 


বিশ্বনৃত্য | ১২১ 


অর্থ কি তার ভাবিয় না পাই, 
কত ও ভালী চিস্তিছে_তাই, 
মহান্‌ মানব-মানস সদাই. 

উঠে পড়ে তারি, শাসনে ! 


শুধু হ্খা,কেন আনন্দ নাই, 
কেন আছে সবে নীরবে ? 
তারকা না দেখি পশ্চিমাকাশে, 
প্রভাত না দেখি পুরবে। 
শুধু চারিদিকে প্রাচীন পাষাণ, 
জগত্-ব্যাপ্ত সমাধি সমান 
গ্রাসিয়া রেখেছে অযুত পরাণ, 
রয়েছে অটল গরবে। 


সংসার-আোত জাহ্বী সম 
বু দূরে গেছে সরিয়া। 

এ শুধু উষর বালুকাধুসর 
মরুবূপে আছে মরিয়া 


১২২ 


84485 


সোনার তরী । 


নাহি কোন গতি, নাহি কোন গান, 

নাহি কোন কাজ, নাহি কোন প্রাণ, 

বমে আছে এক মহ! নির্বাণ 
আঁধার মুকুট পরিয়া 


হদয় আমার ক্রন্দন করে 
মানব-হৃদয়ে মিশিতে। 
নিখিলের সাথে মহ! রাজপথে 
চলিতে দিবস নিশীথে । 
আজন্মকাঁল পড়ে আছি মৃত, 
জড়তাঁর মাঝে হয়ে পরাজিত, 
একটি বিন্দু জীবন অমৃত 
1/কে গো দিবে€এই তৃষিতে । 


জগত্মাতানো সঙ্গীত ক্ষানে 
কে দিবে এদের নাচায়ে ! 
জগতের প্রাণ করাইয়া পাঁন 
কে দিবে এদের বাঁচায়ে ! 
ছিড়িয়া ফেলিবে জাতিজালপাশ, 
মুক্ত হৃদয়ে লাগিবে বাতাস, 
ঘুচায়ে ফেলিয়া মিথ্যা তরাস 
ভাঙ্গিবে জীর্ণ খাঁচা এ! 


বিশ্বনৃত্য | ১২৩ 


বিপুল গভীর মধুর মন্ত্রে 
বাজুক্‌ বিশ্ব বাজন1! 
উঠুক্‌ চিত্ত করিয়! নৃত্য 
বিস্থত হয়ে আপন! ! 
টুটুক্‌ বন্ধ, মহা আনন্দ! 
নব সঙ্গীতে নূতন ছন্দ! 
হৃদয় সাগরে পূর্ণচন্দ্ 
জাগাক্‌ নবীন বাসনা! 


২৬ ফাল্তন, ১২৯৯। 


হর্বোধ। 


তুমি মোরে পার না বুঝিতে ? 
প্রশান্ত বিষাদ ভরে 
ছুটি আঁথি প্রশ্ন করে, 
অর্থ মোর চাহিছে খ্‌জিতে, 
চন্দ্রমা যেমন ভাবে স্থির নত মুখে 
চেয়ে দেখে সমুদ্রের বুকে । 


কিছু আমি করিনি গোপন । 
যাহা আছে, সব আছে 
তোমার আখির কাঁছে 
প্রসারিত অবারিত মন। 
দিয়েছি সমস্ত মোর করিতে ধারণা, 
তাই মোরে বুঝিতে “র না? 


এ যদি হইত শুধু মণি, 
শত থণ্ড করি তারে 
সযত্বে বিবিধাকারে, 
একটি একটি করি” গণি? 
একখানি সুত্রে গাথি একখানি হার 
পরাতেম গলায় তোমার ! 


ুর্ববোধ 1 ১২৫ 


এ যদ্দি হইত শুধু ফুল, 
সুগোল সুন্দর ছোটো, 
উষালোকে ফোটো-ফোটো, 
বসন্তের পবনে দৌছুল, 
বৃস্ত হতে সযতনে আনিতাম তুলে, 
পরাঁয়ে দ্িতেম কালো চুলে ! 


এ যে সখি সমস্ত হৃদয়! 
কোথা জল, কোথা কুল, 
দিক হয়ে যাঁয় ভুল, 
অন্তহীন রহস্ত-নিলয় । 
এ রাজ্যের আদি অন্ত নাহি জান রাণী, 
এ তবু তোমার রাজধানী ! 


কি তোমারে চাহি বুঝাইতে ? 
গভীর হৃদয় মাঝে 
নাহি জানি কি যে বাঁজে 
নিশিদিন নীরব সঙ্গীতে ! 
শবাহীন স্তব্ধতায় ব্যাপিয়া গগন 
রজনীর ধ্বনির মতন। 


১২৬ সোনার তরী । 


এ যদি হইত শুধু সখ, 
কেবল একটি হাসি 
অধরের প্রান্তে আসি 

আনন্দ করিত জাগরূক । 

মুহূর্তে বুবিয়৷ নিতে হ্ৃদয়-বারতা 
বলিতে হত না কোন কথা! 


এ যদি হইত শুধু দুখ, 
ছুটি বিন্দু অশ্রজল 
ছুই চক্ষে ছল ছল, 
বিষগ্ন অধর ম্লান মুখ, 
প্রত্যক্ষ দেখিতে পেতে অন্তরের ব্যথা, 
নীরবে প্রকাশ হত কথ! ! 


এ যে সথি হৃদয়ের প্রেম! 
জুখ হুঃখ বেদনার 
আদি অন্ত নাহি যার 
চির দৈন্ত চির পূর্ণ হেম! 
নব নব ব্যাকুলতা জাগে দিবা রাতে 
তাই আমি না পারি বুঝাতে ! 


ছুর্ব্বোধ। ১২৭ 


নাই বা বুঝিলে তুমি মোরে! 
চিরকাল চোখে চোখে 
নৃতন নৃতনালোকে 
পাঠ কর রাত্রি দিন ধরে। 
বুঝ! যায় আধ প্রেম, আধ খান! মন, 
সমস্ত কে বুঝেছে কখন্‌। 


১১ চৈত্রঃ ১২৯৯। 


ওগো 


ঝুলন। 


পরাণের সাথে খেলিৰ আজিকে 
মরণ খেলা 
নিশীথ বেলা! 
সঘন বরষা গগন আধার 
হের বারিধারে কাদে চারিধার, 
ভীষণ রঙ্গে ভব তরঙ্গে 
ভাসাই ভেলা; 
বাহির হয়েছি স্বপ্ন শয়ন 
করিয়। হেলা, 
রাত্রি বেলা! 


পবনে গগনে সাগরে আজিকে 
কি কল্লোল! 
দে দোল্‌ দোল ' 
পশ্চাঁৎ হতে হাহা «রে হাসি? 
মত্ত ঝটিক] ঠেল! দেয় আদি” 
যেন এ লক্ষ যক্ষ শিশুর 
অট্ট রোল! 
আকাশে পাতালে পাগলে মাতালে 
হট্ট গোল! 
দে দোল্‌ দোল্‌! 


হায়, 


ঝুলন। ১২৯ 


জাগিয়! উঠিয়া পরাণ আমার 
বসিয়া আছে 
বুকের কাছে। 
থাকিয়া থাকিয়া উঠিছে কীপিয়া, 
ধরিছে আমার বক্ষঃ চাঁপিয়া, 
নিঠুর নিবিড় বন্ধনস্থে 
হৃদয় নাচে, 
ত্রাসে উল্লাসে পরাণ আমার 
ব্যাকুলিয়াছে 
বুকের কাছে! 


এতকাল আমি রেখেছিন্ু তারে 
যতন ভরে 
শয়ন পরে। 
ব্যথা পাছে লাগে, ছুথ পাছে জাগে 
নিশিদিন তাই বহু অনুরাগে 
বাষর-শয়ন করেছি রচন 
কুস্থম থরে, 
ছুয়ার রুধিয়! রেখেছিন্ তারে 
গোপন ঘরে 
যতন ভরে! 


শেষে 


সোনার তরী | 


সোহাগ করেছি চুম্বন করি 
নয়ন পাতে 
ন্নেহের সাথে। | 
শুনায়েছি তারে মাথা রাখি পাশে 
কত প্রিয় নাম মৃছ মধুভাষে, 
গুঞ্জর তান করিয়াছি গান 
জ্যোৎনা রাতে, 
যা কিছু মধুর দিয়েছিন্ন তাঁর 
দুখানি হাতে 
স্নেহের সাথে! 


স্থথের শয়নে শ্রাস্ত পরাণ 
আলস রসে, 
আবেশ বশে। 
পরশ করিলে জাঁগে না সে আর 
কুসুমের হার লাগে গুরুভার, 
ঘুমে জাগরণে মিশি একাকার 
নিশি দিবসে; 
বেদনাবিহীন অসাড় বিরাগ 
মরমে পশে 
আবেশ বশে। 


ঢালি' 


ঝুলন। ১৩১ 


মধুরে মধুর বধূরে আমার 
হারাই বুঝি, 
পাইনে খুজি! 
বাসরের দীপ নিঝে নিবে আসে, 
ব্যাকুল নয়নে হেরি চারি পাশে, 
শুধু রাশি রাশি শুফ কুমুম 
হয়েছে পুঁজি! 
অতল স্বপ্ন-সাগরে ডুবিয়া 
মরি যে যুঝি 
কাহারে খুঁজি! 


ভেবেছি আজিকে থেলিতে হইবে 
নূতন খেল! 
রাত্রি বেলা! 
মরণ দোলায় ধরি রসিগাছি 
বমিব ছুজনে বড় কাছাকাছি, 
ঝঞ্ধা আমিয়া অর হাসিয়া 
মারিবে ঠেল!, 
আমাতে প্রাণেতে খেলিব হজনে 
ঝুলন খেলা 
নিশীথ বেল! 


১৩২ 


সোনার তরী । 


দে দোল্‌ দোল্‌! 
দে দোল্‌ দোল্‌! 
এ মহাসাগরে তুফান তোল! 
বধূরে আমার পেয়েছি আবার 
ভরেছে কোল! 
প্রিয়ারে আমার তুলেছে জাগায়ে 
প্রলয় রোল ! 
বক্ষ শোণিতে উঠেছে আবার 
কি হিল্লোল! 
ভিতরে বাহিরে জেগেছে আমার 
কি কল্লোল! 
উড়ে কুস্তল উড়ে অঞ্চল, 
উড়ে বনমালা বাঁয়ু চঞ্চল, 
বাজে কঙ্কণ বাজে কিসঙ্কিণী 
মত্ত বোল! 
দে দোল দোল! 
আয় রে ঝঞ্চা, পরাণ বধূর 
আবরণরাশি করিন। দে দূর, 
করি লুণ্ঠন অবগ্ুঞ্ন 
বস্ন খোল্‌ ! 
দে দোল্‌ দোল! 


প্রাণেতে আমাতে মুখোমুখি আজ 
চিনি লব দৌহে ছাড়ি ভয় লাজ, 


ঝুলন। ১৩৩ 


বক্ষে বক্ষে পরশিব দৌঁহে 
ভাবে বিভোল! 
দে দোল্‌ দোঁল্‌! 

স্বপ্ন টুটিয়া৷ বাহিরেছে আজ 
ছটো পাগোল ! 
দে দোল্‌ দোল্‌! 


১৫ চৈত্র, ১২৯৯। 


যদি 


যদি 


হৃদয়-যমুনা। 
ভরিয়। লইবে কুস্ত, এস ওগো এস, মে 
হৃদয়-নীরে ! 
তলতল ছলছল 
কাদিবে গভীর জল 
ওই ছুটি স্থকোমল 
চরণ ঘিরে। 
আজি বর্ষা গাটতম ; 
নিবিড় কুস্তল সম 
মেঘ নামিয়াছে মম 
ছুইটি তীরে । 
ওই যে শবদ চিনি, 
নৃপুর রিনিকিঝিনি, 
কে গো! তুমি একাকিনী 
আসিছ ধীরে ! 
ভরিয়া লইবে কুভ্ত, এস ওগেো। এস, মো 
হৃদয়-নীগে | 


কলস ভানায়ে জলে বসিয়া থাঁকিতে চা' 
আপনা ভুলে; 

হেথা শ্যাম দূর্বাদল, 

নবনীল নভস্তল, 

বিকশিত বনস্থল 
বিকচ ফুলে । 


যদি 


যদি 


হৃদয়-যমুনা। ১৩৫ 


ছুটি কালো আঁখি দিয়] 

মন যাবে বাহিরিয়া, 

অঞ্চল খসিয়! গিয়া 
পড়িবে খুলে, 

চাহিয়া বঞ্জুল বনে 

কি জানি পড়িবে মনে, 

বসি কুঞ্জে তৃণাসনে 
শ্তামল কুলে। 

কলস ভাসায়ে জলে বসিয়া থাকিতে চাঁও 
আপনা ভূলে! 


গাহন করিতে চাহ, এস নেমে এস, হেথা । 
গহন-তলে ! 
নীলাম্বরে কিবা কাঁজ, 
তীরে ফেলে এস আজ, 
ঢেকে দিবে সব লাজ 
সথনীল জলে। 
সোহাগ-তরঙ্গরাশি 
অঙ্গখানি দিবে গ্রাসি” 
উচ্ছাসি পড়িবে আসি, 
_.. উরসে গলে। 
ঘুরে ফিরে চাঁরিপাঁশে 
কতু কাদে কভু হাসে, 


১৯৩৬ 


যদি 


যদি 


সোনার তরী । 


কুলুকুনু কলভাষে 
কত কি ছলে! 

গাহন করিতে চাহ, এস নেমে এস হেথ 
গহন-তলে ! 


মরণ লভিতে চাঁও, এস তবে ঝাঁপ দাও 
সলিল মাঝে! 
সিপ্ধ, শান্ত, স্থগভীর, 
নাহি তল, নাহি তীর, 
মৃত্যুসম নীল নীর 
স্থির বিরাজে! 
নাহি রাত্রি, দিনমান, 
আদি অস্ত পরিমাণ, 
সে অতলে গীত গান 
কিছু না বাজে। 
যাও সব যাও ভূলে, 
নিখিল বন্ধন "১.১ 
ফেলে দিয়ে এস কুলে 
সকল কাজে! 


যদি মরণ লভিতে চাঁও, এস তবে ঝাঁপ দাও 


সলিল মাঝে! 


১২ আষাঢ়; ১৩' 


কেন 


আজি 


আমি 


বহি” 


হায়, 


ব্যর্থ যৌবন । 


যে রজনী যায় ফিরাইব তায় 
কেমনে ? 

নয়নের জল ঝরিছে বিফল 
নযসনে ? 

এ বেশ ভূষণ লহ সখি লহ, 

এ কুস্থমমালা হয়েছে অসহু, 

এমন যামিনী কাটিল, বিরহ- 
শয়নে ! 

যে রজনী যায় ফিরাইব তাক্ন 
কেমনে? 


বৃথা অভিসারে এ যমুনা পারে 
এসেছি ! 

বৃথা মনো-আশ। এত ভালবাসা 
বেসেছি ! 

শেষে নিশিশেষে বদন মলিন. 

ক্লাস্ত চরণ, মন উদাসীন, 

ফিরিয়া! চলেছি কোন্‌ স্থখহীন 
ভবনে ? 

যে রজনী যায় ফিরাইব তাক্স 
কেমনে? 


১৩৮ 


কত 


বনে 


আজি 


মনে 


যেন 


আহা, 


ওগো, 


সোনার তরী । 


উঠেছিল চাদ নিশীথ-অগাধ 
আকাশে ! 

ছুলেছিল ফুল গন্ধ-ব্যাকুল 
বাতাসে ! 

তরু-মর্্বর, নদী কলতান 

কানে লেগেছিল স্বপ্র সমান, 

দূর হতে আসি পশেছিল গান 
শ্রবণে, 

সে রজনী যাঁয় ফিরাইব তায়, 
কেমনে? 


লেগেছিল হেন আমারে সে যেন 
ডেকেছে । 

চির যুগ ধরে মোরে মনে করে' 
রেখেছে ! 

সে আনিবে বহি ভরা অনুরাগ, 

যৌবন নদী কৰি সজাগ, 

আসিবে নিশীথে, বাধিবে সোহাঁগ- 
বাঁধনে । 

সে রজনী যাঁয়, ফিরাইব তায় 
কেমনে ? 


ভোল! ভাল তবে, কাঁদিয়া কি হবে 
মিছে আর ?. 


হায় 


ব্যর্থ যৌবন। ১৩৯ 


যেতে হল হায়, প্রাণ কেন চায় 
পিছে আর? 
কুঞ্গছুয়ারে অবোধের মত 
রজনী-প্রভাতে বসে রব কত! 
এবারের মত, বস্তুগত. 
জীবনে । 


যে রজনী যায় ফিরাইব তায় 
কেমনে! 


১৬ আধাঢ়, ১৩০০ । 


/ভরা ভাদরে। 


নদী ভরা কূলে কূলে, ক্ষেতে ভরা ধান। 
আমি ভাবিতেহি বসে কি গাহিব গান! 
কেতকী জলের ধারে 
ফুটিয়াছে ঝোপে ঝাড়ে, 
নিরাকুল ফুলভারে 
বকুল বাগান। 
কানায় কানায় পুর্ণ আমার পরাণ। 


ঝিলিমিলি করে পাতা, ঝিকিমিকি আলো । 
আমি ভাবিতেছি কার আখি ছুটি কালো ! 
কদশ্বগাছের সার, 
চিকন পল্লবে তার 
গন্ধে ভর অন্ধকার 
হয়েছে ঘোরাঁলো । 
কারে বলিবারে চাহি কাকে বাসি ভালো ! 


অল্লান-উজ্জবল দিন, বৃি অবসান । 
আমি ভাবিতেছি আজি কি করিব দান! 
মেঘখণ্ড থরে থরে 
উদাস বাতাস ভরে 
নানা ঠাই ঘুরে মরে 
হতাশ সমান । 
সাধ যায় আপনারে করি শত খান্‌! 


ভর] ভাদরে। ১৪১ 


দিবদ অবশ যেন হয়েছে আলমে। 
আমি ভাবি আর কেহ কি ভাবিছে বদে' ! 
তরুশাখে হেল্লাফেলা 
কামিনী ফুলের মেলা, 
থেকে থেকে সারাবেল! 
পড়ে খসে” খসে? । 
কি বাশি বাজিছে সদ] প্রভাতে গ্রদোষে ! 


পাখীর প্রমোদগানে পূর্ণ বনস্থল। 
আমি ভাবিতেছি চোখে কেন আমে জল! 
দোয়েল ছুলায়ে শাখা 
গাহিছে অমূতমাথা, 
নিভৃত পাতায় ঢাকা 
কপোত যুগল। 
আমারে সকলে মিলে করেছে বিকল! 


খ্ণ আষাঢ়) ১৩০০। 


প্রত্যাখ্যান। 


অমন দীন-নয়নে তুমি 
চেয়ে। না! 

অমন স্ধা-করুণ স্থুরে 
গেয়ো না! 

সকাল বেলা সকল কাজে 

আসিতে যেতে পথের মাঝে 

আমারি এই আঙিন। দিয়ে 
যেয়ো না! 

অমন দীন-নয়নে তুমি 
চেয়ো না! 


মনের কথা রেখেছি মনে 
যতনে ; 
ফিরিছ মিছে মাসি ' সেই 
রতনে ! 
তুচ্ছ অতি, কিছু সে নয় 
হু চারি ফৌট! অশ্রময় 
একটি শুধু শোণিত-রাউ! 
বেদন। ! 
অমন দীন-নয়নে তুমি 
চেয়ো না! 


প্রত্যাখ্যান । 


কাহার আশে দুয়ারে কর 
হানিছ? 

না জানি তুমি কি মোরে মনে 
মানিছ? 

রয়েছি হেথা লুকাঁতে লাজ, 

নাহিক মোর রাণীর সাজ, 

পরিয়া আছি জীর্ণচীর 


বাসন। । 
অমন দীন-নয়নে তুমি 
চেয়ো৷ ন1 ! 


কি ধন তুমি এনেছ ভরি? 
হুহাতে ? 

অমন করি? যেয়ো না ফেলি” 
ধূলাতে ! 

এ খণ যদি শুধিতে চাই, 

কি আছে হেন, কোথায় পাই, 

জনম তরে বিকাঁতে হবে 
আপনা ! 

অমন দীন-নয়নে তুমি 
চেয়ো৷ না ! 


ভেবেছি মনে ঘরের কোণে 
রহিব। 


১৪৩ 


১৪৪ 


সোনার তরী । 


গোপন হুখ আপন বুকে 
বহিব! 

কিসের লাগি করিব আশা, 

বলিতে চাহি, নাহিক ভাষা, 

রয়েছে সাধ, না! জানি তার 
সাধনা! 

অমন দীন-নয়নে তুমি 
চেয়ো না! 


যে সুর তুমি ভরেছ তৰ 
বাশিতে 

উহার সাথে আমি কি পারি 
গাহিতে ? 

গাহিতে গেলে ভাঙ্গিয়া গান 

উছলি উঠে সকল প্রাণ, 

না মানে রোধ অতি অবোধ 
রোদন? 

অমন দীন-নয়নে তুমি 
চেয়ো না! 


এসেছ তুমি গলায় মালা 
ধরিয়া, 

নবীন বেশ, শোভন ভূ! 
পরিয়! । 


প্রত্যাখ্যান | ১৪৫ 


হেথায় কোথা কনক থাল!, 
কোথায় ফুল, কোথায় মালা, 
বাসর-সেবা করিবে কেবা 
বচন! ? 
অমন দীন-নবনে তুমি 
চেয়ো না! 


ভুলিয়া! পথ এসেছ সথা। 
এ ঘরে ! 
অন্ধকারে মালা-বদল 
কে করে! 
সন্ধ্যা হতে কঠিন ভুয়ে 
একাকী আমি রয়েছি শুয়ে, 
নিবায়ে দীপ জীবন-নিশি- 
যাপনা ! 
অমন দীন-নয়নে আর 
চেয়ো না ! 


২৭ আযাঢ়, ১৩০০। 


লজ্জা । 


আমার হৃদয় প্রাণ 
সকলি করেছি দান, 
কেবল সরম খানি রেখেছি! 
চাহিয়া নিজের পানে 
নিশিদিন সাবধানে 
সযতনে আপনারে ঢেকেছি। 


হে বধুঃ এ স্বচ্ছ বাস 
করে মোরে পরিহাস, 
সতত রাখিতে নারি ধরিয়া, 
চাহিয়া আখির কোণে 
তুমি হাস মনে মনে 
আমি তাই লাজে যাই মরিয়া! ! 


দক্ষিণ পবন ভরে 

অঞ্চল উড়িয়া পড়ে, 
কখন্‌ যে, নাহি পারি লথিতে, 

পুলক ব্যাকুল হিয়! 

অঙ্গে উঠে বিকশিয়া, 
আবার চেতন! হয় চকিতে! 


লজ্জা | ১৪৭ 


বদ্ধ গৃহে করি বাদ 
রুদ্ধ যবে হয় শ্বাস, 
আধেক বসন বন্ধ খুলিয়া 
বসি গিয়া বাতায়নে 
স্থখসন্ধ্যা সমীরণে 
ক্ষণতরে আপনারে ভুলিয়! ; 


পূর্ণচন্্র কর রাশি 
মুচ্ছাভুর পড়ে আসি 
এই নব যৌবনের মুকুলে, 
অঙ্গ মোর ভালবেসে 
ঢেকে দেয় মৃত হেসে 
আপনার লাবণ্যের ছকুলে ; 


মুখে বক্ষে কেশপাশে 
ফিরে বাধু খেলা-আঁশে, 
কুস্থমের গন্ধ ভাসে গগনে, 
হেন কালে তুমি এলে 
মনে হয় স্বপ্ন বলে? 
কিছু আর নাহি থাকে স্মরণে! 


থাক্‌ বধু, দাও ছেড়ে, 
ও টুকু নিয়ো না কেড়ে, 


এ রানা হেই পযকার আাথিতে. 


১৪৮ 


সোনার তরী । 


সকলের অবশেষ 
এই টুকু লাজ লেশ, 
আপনারে আধ থানি ঢাকিতে। 


ছল ছল ছনয়ান 

করিয়ে না অভিমান, 
আমিও যে কত নিশি কেঁদেছি, 

বুঝাতে পারিনে যেন 

সব দিয়ে তবু কেন 
সবটুকু লাজ দিয়ে বেঁষেছি, 


কেন যে তোমার কাছে 
একটু গোপন আছে, 
একটু রয়েছি মুখ হেলায়ে ! 
এ নহে গো অবিশ্বাস, 
নহে সথা, পরিহাস, 
নহে নহে ছলনাব -খলা এ! 


বসস্ত-নিশীথে বধু 

লহ গন্ধ, লহ মধু, 
সোহাগে মুখের পানে তাকিয়ো ! 

দিয়ো দোল আশে পাশে, 


কোকো, কথা মৃদু ভাষে, 
জজ এস আোজতকা অবনিযাসণ ॥ 


খেলা । 


হোক খেল, এ খেলায় যোগ দিতে হবে 
আনন্দ কল্লোলাকুল নিখিলের সনে! 
সব ছেড়ে মৌন হয়ে কোথা বসে রবে 
আপনার অন্তরের অন্ধকার কোণে! 
জেনো মনে শিশু তুমি এ বিপুল ভবে 
অনন্ত কালের কোলে, গগন-প্রাঙ্গ ণে, 
যত জান মনে কর কিছুই জান না) 
বিনয়ে বিশ্বাসে প্রেমে হাতে লহ তুলি। 
বর্ণগন্ধগীতময় যে মহা খেলন! 

তোমারে দিয়াছে মাতা? হয় যদ্দি ধুলি 
হোক্‌ ধূলি, এ ধূলির কোথায় তুলন! ! 
থেকো না৷ অকালবৃদ্ধ বসিয়া একেলা, 
কেমনে মানুষ হবে না করিলে খেলা ! 


বন্ধন । 


বন্ধন? বন্ধন বটে, সকলি বন্ধন 

স্নেহ প্রেম স্খতৃষ্জী) নে যে মাতৃপাণি 
স্তন হতে স্তনান্তরে লইতেছে টানি”, 
নব নব রসস্রোতে পূর্ণ করি” মন্‌ 

সদ করাইছে পান! স্তন্যের পিপাসা 
কল্যাণদায়িনীরূপে থাকে শিশু মুখে 
তেমনি সহজ তৃষ্ণা আঁশ! ভালবাসা 
সমন্ত বিশ্বের রদ কত স্থুথে ছুখে 
করিতেছে আকর্ষণ, জনমে জনমে 

গ্রাণে মনে পূর্ণ করি গঠিতেছে ক্রমে 
ছু জীবন) পলে পলে নব আশ. -১৭গ: 
নিয়ে যায় নব নব আস্বা্দে আশ্রমে । 
্তনততৃষ্ণা নষ্ট করি মাঠৎদ্ধপাশ 

ছিন্ন করিবারে চাম্‌ কোন্‌ মুক্তিভ্রমে ! 


গতি । 
জানি আমি সুখে হুঃথে হাঁসি ও ক্রন্দনে 
পরিপূর্ণ এ জীবন, কঠোর বন্ধনে 
ক্ষতচিহ পড়ে? বায় গ্রন্থিতে গ্রন্থিত, 
জানি আমি সংসারের সমুদ্র মন্থিতে 
কারো ভাগ্যে সুধা ওঠে, কাঁরো৷ হলাহল;__ 
জানি না কেন এ সব, কোন্‌ ফলাফল 
আছে এই বিশ্বব্যাপী কর্ম্-শৃঙ্খলার,_ 
জানি না কি হবে পরে, সবি অন্ধকার 
আদি অন্ত এ সংসারে; নিখিল-ছুঃখের 
অন্ত আছে কি না আছে, স্থুখ-বুভুক্ষের 
মিটে কি না চির-আশ। ! পণ্ডিতের দ্বারে 
চাহি না এ জনম-রহন্ত জানিবারে ! 
চাহি না ছিড়িতে এক] বিশ্বব্যাপী ভোর, 
লক্ষ কোটা প্রাণী সাথে এক গতি মোর! 


মুক্তি। 


চক্ষু কর্ণ বৃদ্ধি মন সব রুদ্ধ করি, 
ব্মিখ হইয়া সর্ব জগতের পানে, 
শুদ্ধ আপনার ক্ষুদ্র আত্মাটিরে ধরি 
মুক্তি আশে সন্তরিব কোথায় কে জানে! 
পার্খ দিয়ে ভেসে যাবে বিশ্ব মহাঁতরী 
অন্বর আকুল করি যাত্রীদের গানে, 
শুত্র কিরণের পালে দশদিক ভরি+, 
বিচিত্র সৌনর্য্যে পূর্ণ অসংখ্য পরাণে ! 
ধীরে ধীরে চলে যাবে দূর হতে দুরে 
অখিল ক্রন্দন হাঁসি আধার আলোক, 
বহে যাবে শূন্ত পথে সকরুণ সুরে 
অনন্ত জগংভরা যত দুঃখ শোশ। 
বিশ্ব যদি চলে যায় কাদিতে শাদিতে 
আমি একা বদে র'ব মৃকলমাধিতে ? 


অক্ষমী । 


যেখানে এসেছি আমি, আমি দেখাকার, 
দরিদ্র সন্তান আমি দীন ধরণীর ! 
জন্মাবধি যা পেয়েছি স্থখছুখতার 

বহু ভাগ্য বলে তাই করিয়াছি স্থির। 
অসীম শশব্ধ্যরাশি নাই তোর হাতে 

হে শ্তামলা সর্বসহ!' জননী মুগনয়ী ! 
সকলের মুখে অন্ন চাহিস্‌ যোগাতে, 
পারিস নে কতবার,--কই অন্ন কই 
কাদে তোর সন্তানের! শান শুষ্ক মুখ) 
জানি মাগো, তোর হাঁতে অমম্পূর্ণ সুখ, 
যা-কিছু গড়িয়া দিস্‌ ভেঙ্গে ভেঙ্গে যায়, 
সব তা'তে হাত দেয় মৃত্যু সর্বভূক্‌, 

সব আশ! মিটাইতে পারিস্নে হায় 

তা বলে” কি ছেড়ে যাব তোর তপ্ত বুক! 


আবি 


দরিদ্রা। 


দরিদ্র! বলিয়া তোরে বেশি ভালবাি 

হে ধরিত্রী, স্নেহ তোর বেশি ভাল লাগে, 
বেদনা-কাতর মুখে সকরুণ হাসি 

দেখে মোর মন্ মাঝে বড় ব্যথা জাগে! 
আপনার বক্ষ হতে রস রক্ত নিয়ে 
প্রাণটুকু দিয়েছিস্‌ সন্তানের দেহে, 
অহরিশি মুখে তার আছিদ্‌ তাকিয়ে 
অমৃত নারিস্‌ দিতে প্রাণপণ স্নেহে! 
কত যুগ হতে তুই বর্ণ গন্ধ গীতে 

স্বজন করিতেছিম আনন্দ আবাস, 
আজো! শেষ নাহি হল দিবসে নিশীথে, 
স্বর্গ নাই, রচেছিস্‌ স্বর্ণের আভাস! 
তাই তোর মুখখানি বিষা"একোমল, 
সকল সৌনর্য্যে তোর 7 অশ্রজল! 


আত্মমমর্পণ। 


তোমার আনন্দগানে আমি দিব স্থুর 
যাহা জানি ছুয়েকটি গ্রীতি-সথমধুর 
অন্তরের গাথা ; ছুঃথের ক্রনদনে 

বাজিবে আমীর কণ্ঠ বিষাদ-বিধুর 
তোমার কণ্ঠের সনে ; কুস্থমে চন্দনে 
তোমারে পুজিব আমি ; পরাৰ সিন্দুর 
তোমা সীমস্তে ভালে ; বিচিত্র বন্ধনে 
তোমারে বাধিব আমি; প্রমোদ-সিন্ধুর 
তরঙ্গেতে দিব দোল! নব ছন্দে তানে! 
মানব-আত্মার গর্ধ আর নাহি মোর, 
চেয়ে তোর স্নিদ্বশ্তাম মাতৃমুখ পানে, 
ভাল বাঁসিয়াছি আমি ধুলি মাঁটি তোর! 
জন্মিছে যে মর্ত্য-কোলে দ্বণা করি তারে 
ছুটিব না স্বর্গ আর মুক্তি খু'ঁজিবারে ! 


৫ অগ্রহায়ণ, ১৩০০। 


অচল স্মৃতি । 


আমার হদয়-ভূমি-মাঁঝখানে 
জাগিয়া রয়েছে নিতি 

অচল ধবল শৈল সমান 
একটি অচল স্রতি। 
প্রতিদিন ঘিবি ঘিরি 
সে নীরব হিমগিরি 

আমার দিবস আঁমাঁর রজনী 
আসিছে যেতেছে ফিবি। 


যেখানে চরণ রেখেছে, জে নার 
মন্ম গভীরতম, 

উন্নত শির বুয়েছে তুলিয়। 
সকল উচ্চে মম। 
মোর কন্মনা শত 
রডীন্‌ মেঘের মত 

তাহাঁরে ঘেরিকা। হাঁসিছে কাঁদিছে 
€সাহাগে হতেছে নত। 


অচল স্বৃতি। ২০১ 


আমার শ্যামল তরুলতাগুলি 
ফুল পল্পব ভারে 
সরস কোমল বাহু-বেষ্টনে 
বাঁধিতে চাঁহিছে তারে। 
শিখর গগন-লীন 
দুর্গম জনহীন, 
বাসনা-বিহগ একেল। সেথায় 
ধাইতেছে নিশিদিন। 
চারিদিকে তার কত আসা-যাওয়া 
কত গীত কত কথা, 
মাঝথানে শুধু ধ্যানের মতন 
নিশ্চল নীরবতা । 
দূরে গেলে তবু, একা 
সে শিখর যায় দেখা, 
চিত্ব-গগনে আঁক থাঁকে ভার 
নিত্য-নীহার-রেখা ! 


৯১ অগ্রহায়ণ, শা 1 


তুলনায় সমালোচনা ৷ 


একদা পুলকে প্রভাত আলোকে 
গ্রাহিছে পাখী) 

কহে কণ্টক বাঁকা কটাক্ষে 
কুক্তামে ডাকি? 35 

ভুমি ত কোমল বিলাসী কমল, 
ছলাঁক বায়ু, 

দিনের কিরণ ফুরাতে ফুরাতে 
ফুরায় আমু 

এ পাশে মধুপ মধুমদে তোর, 

ও পাশে পবন পরিমল-তোর, 

বনের দুলাল, হাসি প ন তত 
অআধদকব দেঞ্ে 

আছ? মার্রি মরি কি রীনা বেশ, 

সোহাগ হাদির নাহি আর শেষ, 

সারাবেলা ধরি রসালসাবেশ 
গন্ধ মেখে” ! 

হায় ক'দিনের আদর সোহাগ 
সাধের থেলা ! 

ললিত মাধুরী, বুণ্ীন্‌ বিলাস, 


ওগো। নহি আমি তোদের মতন 
সুখের প্রাণী, 

হাব ভাব হাস, নানারত বাস 
নাহিক জানি ! 

রয়েছি নগ্র, জগতে লগ 
আপন বলে, 





কে পারে তীঁড়ীতে আমারে মাকাতে 
ধরণী তলে ! 
তোদের মতন নছি নিমেষের, 
আমি এ নিথিলে চিব-িবসের, 
বৃষ্টিবীদল বড়বাঁতীসের 
না রাখি ভয়! 
সতত একাকী, সঙ্গীবিহীন, 
কারে। কাছে কোন নাহি প্রেম-খখণ, 
চাঁটুগান শুনি সারা নিশিদিন 
করি না ক্ষয়! 
আসিবেক শীত, বিহঙ্গগীত 
যাইবে থামি”, 
ফুলপল্লপব ঝৰে” যাবে সব, 
রহিব আমি! 


--১৯ 


২০৪ 


সোনার তরী । 


স্পষ্ট সকলি, আমার মূল্য 
জানে সবাই । 
এ ভীরু জগতে যার কাঠিন্ত 
জগৎ তারি। 
নখের আঁচড়ে আপন চিন্ু 
রাখিতে পারি ! 
কেহ জগতেরে চাঁমর টুলায়, 
চরণে কোমল হস্ত বুলায়, 
নত মন্তকে লুটায়ে ধূলায় 
প্রণাম করে। 
ভুলাইতে মন কত করে ছল, 
কাহারো বর্ণ, কারো পরিমল, 
বিফল বাসরসজ্জা, কেবল 
ছু দিন তরে। 


কিছুই করি না, নীরবে দীডায়ে 


তুলিয়া শির 
বিধিয়া রয়েছি অন্তর মাঝে 
এ পৃথিবীর । 


আমারে তোমর! চাহ ন! চাহিতে 
চোখের কোণে, 
গরবে ফাটিয়া! উঠেছ ফুটিয়া 


তুলনায় সমীলোচনা । . ২০৫ 


আছে তব মধু, থাক্‌ সে তোমার, 
আমার নাহি। 
আছে তব রূপ,--মোর পানে কেহ 
দেখে ন! চাহি। 
কারো আছে শাখা, কারে! আছে দল, ঙ 
কারো আছে ফুল, কারো আছে ফল, 
আমারি হস্ত রিক্ত কেবল 
দিবসযামী! 
ওহে তরু তুমি বৃহৎ প্রবীণ, 
আমাদের প্রতি অতি উদাসীন, 
আমি বড় নহি আমি ছায়াহীন, 
কুদ্র আমি। 
হ্ই না ক্ষুদ্র, তবুও রুদ্র 
ভীষণ ভয়, 
'আমার দৈন্ঠ সে মোর সৈস্ত 
তাহারি জয়। 


৯ কান্তিক, ১৩০০ । 


নিরুদ্দেশ যাত্র! । 


আর কত দূরে নিয়ে যাবে মোরে 
হে সুন্দরি? 
বল কোন্‌ পার ভিড়িবে তোমার 
সোনার তরী? 
যখনি শুধাই, ওগো! বিদেশিনী, 
তুমি হাঁস শুধু, মধুরহাসিনী, 
বুঝিতে না পারি, কি জানি কি আছে 
তোমার মনে? 
নীরবে দেখাও অঙ্গুলি তুলি, 
অকুল সিন্ধু উঠিছে আকুলি+, 
দুরে পশ্চিমে ভুবিছে তপন 
গগন-কোণে। 
কি আছে হোথার--চলেছি কিসের 
অন্বেষণে ? 


বল দেখি মোরে শুধাই তোমায়, 
অপুরিচিত__ 

ওই যেথা! জলে দন্ধ্যার কুলে 
দিনের চিতা, 

ঝলিতেছে জল তরল অনল, 

গলিয়া! পড়িছে অশ্বরতল, 


| 


নিরুদ্দেশ যাত্রা ॥ ২০৭ 


দিকৃবধূ যেন ছলছল আখি 
অশ্রজলে, | 
হোথায় কি আছে আলয় তোমার 
উন্মিমুখর সাগরের পার, 
মেঘচুম্বিত অন্তগিরির 
চরণতলে ? 
তুমি হাঁস শুধু মুখপানে চেয়ে 
কথা না বলে” ! 


হৃহু ক'রে বায়ু ফেলিছে সতত 
দীর্ঘশ্বাস ! 

অন্ধ আবেগে করে গর্জন 
জলোচ্ছাস ! 

সংশয়ময় ঘননীল নীর 

কোন দিকে চেয়ে নাহি হেরি তীর, 

অসীম রোদন জগৎ প্লাবিয়া 
ছুলিছে যেন; 

তারি পরে ভাঁসে তরণী হিরণ, 

তারি পরে পড়ে সন্ধ্যা-কিরণ, 

তারি মাঝে বমি এ নীরব হাসি 
হাসিছ কেন? 

আমি ত বুঝি না কি লাগি তোমার 
বিলান হেন? 


মোনার তরী । 


যখন প্রথম ডেকেছিলে তুমি 
“কে যাবে সাথে ?” 

চাহিন্ু বারেক তোমার নয়নে 
নবীন প্রাতে ৷ 

দেখালে সমুখে প্রসারিয়া কর 

পশ্চিম পানে অসীম সাগর, 

চঞ্চল আলে আশার মতন 
কাপিছে জলে। 


তরীতে উঠিয়া শুধান্নু তখন 


আছে কি হোথায় নবীন জীবন, 

আশার স্বপন ফলে কি হোথায় 
সোনার ফলে? 

মুখপানে চেয়ে হাসিলে কেবল 
কথ। না বলে” । 


তারপরে কতু উঠিয়াছে মঘ, 
কখনো রবি, 
কখনো ক্ষুব্ধ সাগর, কখনো! 
শান্ত ছবি। 
বেলা বহে" যায়, পালে লাগে বায়, 
সোনার তরণী কোথা চলে? যায়, 


পশ্চিমে হেরি নামিছে তপন 
আকাল | 


নিরুদেশ যাঁত্র। | ২০৯ 


এখন বারেক শুধাই তোমায় 
শিপ্ধ মরণ আছে কি হোঁথায়, 
আছে কি শাস্তি, আছে কি স্থপ্তি 
তিমির তলে? ৰা 
হাসিতেছ তুমি তুলিয়া ন্য়ন 
কথ। না বলে” 


আধার রজনী আসিবে এখনি 
মেলিয়1! পাখা, 

সন্ধ্যা-আকাশে স্বর্ণআলোক 

পড়িবে ঢাঁক!।, 

শুধু ভাষে তব দেহ-০।রভ, 

শুধু কানে আসে জল-কলরব, 

গায়ে উড়ে পড়ে বাযুভরে, তব 
কেশের রাশি। 

বিকল হৃদয় বিবশ শরীর 

ডাঁকিয়া তোমারে কহিব অধীর-_ 

“কোথ। আছ ওগে। করহ পরশ 
নিকটে আসি; » 

কহিবে না কথা, দেখিতে পাব না! 
নীরব হাসি! 


২৭ অগ্রহায়ণ, ১৩০০ । 


€ও" সাহিতা-ধস্ব ; ১৩)৭ বৃষাম বহর লেন ; হোগলকুড়িয়া, কলিফাঃ